Wednesday, May 29, 2019

বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায়, নেতাজী সুভাষচন্দ্র থেকে শেখা বাঙালি ও বাঙালিয়ানা আর তার সঙ্গে গায়ের জোরে জয় শ্রীরাম। এক তরুণ বাঙালি শুভম গাঙ্গুলির একটি সুন্দর বিশ্লেষণ

"বিদ্যাসাগর" সিনেমাটি যারা দেখেছেন, তারা একটি দৃশ্যের সঙ্গে বিশেষভাবে পরিচিত থাকবেন যেখানে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় আগত এক যুবককে হিন্দুধর্ম "বলতে কি বোঝো" সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দেন "হিন্দু ধর্ম উদার"। এরপরে অবশ্য সেই যুবকের প্যানটুলুন খুলে দেওয়ার মতো অনেক কথাই বলেন কৃষ্ণমোহনবাবু।

সমস্যাটা এখানেই। এখন কলকাতার রাস্তায় দেখি "জয় শ্রী রাম" বলে একে-অপরকে অভিবাদন জানাচ্ছে লোকেরা। অবাক হয়ে যাই। জিজ্ঞেস করলে বলে সেই এক কথা.... "হিন্দু ধর্ম উদার"!

বাঙালি কোনোদিন নিজের জিনিসটাকে সম্মান করতে জানলো না। সবসময়, এ কি করছে, ও কি করছে, এই দেখে, দেখে আর টুকতে টুকতে জীবন গেল। "বাঙালি জাতীয়তাবাদ" জিনিষটা কি আজ অবধি কেউ বুঝলো না, এরকম মনস্তত্ত্বের জন্য।

বঙ্কিম লিখেছিলেন, "বাঙালি হলো বাবুর্চি করো পক্ক কুক্কুট মাংস লোলুপ"।

বাঙালির সম্পদ কোনোদিন বাঙালি দেখতে পেলোনা। এক দল এসে বললো, "নাস্তিকতা মানব উন্নয়নের চাবিকাঠি"। বাঙালি বললো, "হ্যাঁ, তাই তো....নাও, সবাই নাস্তিক হও"। ৫০ বছর পর আরেকটা দল এসে বললো, "জয় শ্রী রাম বলো"। বাঙালি বললো, "হ্যাঁ, চলো, জয় শ্রী রাম বলি"। এই মেরুদন্ড নিয়ে আবার সুভাষচন্দ্র বসুর কথা বলে।

বাঙালির জাতীয়তাবাদ কবে বেরোয়? ২৫শে বৈশাখ, ১১ই জ্যৈষ্ঠ (সেদিন "বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম" বলে পাড়ায় পাড়ায় রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী), ২২শে শ্রাবণ আর ১৫ই আগস্ট, যেদিন মনে পড়ে "হ্যাঁ, জাতীয় সঙ্গীত আর জাতীয় গান দুটোই দুই বাঙালির লেখা"। অন্য সময় কি হয় তোমার বাঙালি?

আজ জানেন কেন তামিল নাড়ু আর কেরালা আমাদের সকলের থেকে এত এগিয়ে? কারণ ওদের জাতীয়তাবাদ, বাইরের শক্তি এবং সংস্কৃতিকে বাইরে রাখার আত্মপ্রত্যয় তাদের এগিয়ে রেখেছে। আর ঠিক ওই তামিল নাড়ু-কেরালা অঞ্চলটিতে মৌর্য, দিল্লি সুলতানেট, মুঘল...কেউ দাঁত ফোটাতে পারেনি। আর তোমার এখানে?

বাঙালি, তুমি নিজের জিনিষটাকে সম্মান দিতে জানোনি। দিলীপ ঘোষ অমর্ত্য সেনকে বলে গেল, "এক হাতে কেনা যায়, অন্য হাতে বিক্রি করা যায় ওনাকে"। তোমার প্রতিক্রয়া কতটা জোরালো ছিল? কেন জোরালো ছিলোনা জানো? তুমি যোগ্য নও অমর্ত্য সেনকে পাওয়ার। তোমার রাজ্যে ঢুকে তোমার বিদ্যাসাগরের মূর্তি গুঁড়িয়ে দিলো, এখনো একটা ভাগ "জ্যায়সিরাম" বলে চেঁচিয়ে যাক।

কোনদিন দেখেছো কোনো বিহারীকে "জয় মা কালী" বা "জয় নিতাই" ধ্বনি দিতে? দেখোনি। কিন্তু আমি মেরুদন্ডহীন বাঙালি দেখেছি "জ্যায়সিরাম" ধ্বনি দিতে। যাও না কোনো বিহারীকে বলতে, "জয় নিতাই" বলতে, বাপ-মা তুলে খিস্তি খাওয়া অবধারিত। না, তোমাকে তো "জ্যায়সিরাম" ধ্বনি দিতে হবে!

এখানে 'আমরা-ওরা' বিভাজন আসছে। না আসলে নেডা চেয়ারপার্সন এবং বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলতো না, "আমার ধুতি-লুঙ্গির ভোট চাইনা" (ধুতি অর্থে হিন্দু বাঙালি, লুঙ্গি অর্থে মুসলমান বাঙালি)। 'আমরা-ওরা' বিভাজন না থাকলে ২৮ লক্ষ হিন্দু বাঙালি আর ১০ লক্ষ মুসলমান বাঙালির নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হতোনা আসামে।

তোমার কাছে তো এটা কোনো ব্যাপারই না, তাই না বাঙালি? অসমে হিন্দু বাঙালিদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পোড়া হচ্ছে, তোমার তো কিছু যায় আসে না বাঙালি? ৪২জনের মৃত্যু হয়েছে সেই ডিটেনশন ক্যাম্পে, তাদের মধ্যে ৩৮জন হিন্দু বাঙালি....তোমার তো কিচ্ছু যায় আসেনা, তাই না বাঙালি? তোমার তো এখন বিহারীদের পা-চাটার থেকে নিস্তার পেয়ে একটু সময় বের করাও দুঃসাধ্য!

তোমার কাছে অসমে হিন্দু বাঙালি নিধন কোনো ব্যাপার না, তোমার দুর্গা বেদি ভেঙে দেবে বিজেপি বিধায়কের ছেলে, তোমার কাছে কোনো ব্যাপার না, তোমার পূজোগুলোকে ইনকাম ট্যাক্স নোটিস ধরানো হবে, তুমি চুপ করে থাকো.... তারপর বলো, "জ্যায়সিরাম"। আজ মহারাষ্ট্রে গণেশ পুজোতে ওরা ইনাকম ট্যাক্স নোটিস ধরাতে পেরেছে? বলতে পেরেছে তাদের যে পুরোহিত থেকে প্রতিমাশিল্পী, সবাই টিডিএস কাটাবে? বললে আজ মারাঠিরা আগুন লাগিয়ে দিত!

তোমাদের করতে পেরেছে কেন? তুমি ম্যাদামারা বলে, চাটুকারিতা করা স্বভাব বলে। তোমার রাজ্যে এসে অমিত শাহ বলে যাবে, "ইহাপে দুর্গা পুজো নেহি হোতা"। তুমি ঘাড় নারবে, তারপর একডালিয়াতে ঢোকার মুখে এগ রোল চিবোবে। তোমার রাজ্যে এসে তোমার রাজ্যকে "কাঙাল" বলে যাবে অমিত শাহ, আর তুমি ঘাড় নারবে।

তোমার কাছে অসমে হিন্দু বাঙালি নিধন কোনো মাথাব্যথার কারণ না, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা ২০ সেকেন্ডের ক্লিপড ভিডিও দেখে হনুদের মতো লাফালাফি করবে।

তোমার ওপর বিশ্বাস চলে গেছে, কোনদিন বলবে "হিন্দুধর্ম উদার, তাই এবার পুজোর সময় নবরাত্রি করবো"। কোনদিন বলবে, "বিদ্যাসাগর আর রাজা রামমোহন রায় হিন্দুধর্মের কলঙ্ক! কে বলেছিল সতীপ্রথা বন্ধ করতে? কে বলেছিল বিধবা বিবাহের প্রচলন করতে? কে বলেছিল মহিলাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে?" কারণ তুমি এরকমই!

আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হিন্দি তোষণ সমর্থন করিনা, যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন, তাই বললাম।

তুমি জি বাংলায় সাড়ে ৮টায় "নেতাজি" দেখো, তারপর "জ্যায়সিরাম" বলে চিৎকার করো। এইটা মনে রেখো, এই সুভাষ শ্যামাপ্রসাদকে চড় মেরেছিলেন আর হিন্দু মহাসভাককে "ধর্মের ব্যবসায়ী" আখ্যা দিয়েছিলেন। এই বাঙালি সুভাষের যোগ্য নয়।

আর হ্যাঁ, আমি সকলের ক্ষেত্রে বলছিনা। জাতীয়তাবাদী বাঙালি আছেন, অনেক আছেন, কিন্তু মেরুদণ্ডহীনদের কাছে আমরা সংখ্যায় অতি নগণ্য। আপনারা কিছু মনে করবেননা।

আমি যা লিখেছি, খুব কষ্টের সঙ্গে, খুব দুঃখের মধ্যে লিখেছি। আমি মার্জনাপ্রার্থী।

একটা জিনিষ জানি, "ওদের রাম নিজের বউকে আগুনের মধ্যে ঠেলে, আমার রাম অন্যের বউকে আগুন থেকে বের করে আনে"।

জয় হিন্দ
জয় বাংলা
জয় মা দুর্গা
জয় মা কালী
জয় মা দুর্গা
জয় নেতাজি

This article is written by a college student "Subham Ganguly".
Thanks to him for this nice article and his thought.


Please see other posts in this blog page by clicking "Home" or from "My Favorite Posts" / "Popular Posts" / "Archives" sections.

If you have any remarks please feel free to post. Thanks & Vande Mataram!!
Saroop Chattopadhyay.

No comments:

Post a Comment

Some recent posts

ভগবান রামচন্দ্র (রঘুবীর) ও ঠাকুর শ্রী রামকষ্ণ পরমহংস দেব, আর বর্তমানের সেক্যুলার (আসলে সিক কুলার) গণ।

শ্রীরামকৃষ্ণের কুলদেবতা ছিলেন ৺রঘুবীর। তিনি নিজে  দেবতার কবচ পরতেন, তাঁর পার্থিব শরীর পঞ্চভূতে লয় হওয়ার পরবর্তী সময়ে শ্রীমা সেই পবিত্র কব...