Sunday, June 7, 2020

১৯৪৬ সালে কলকাতার ও বাংলার হিন্দুদের মুসলিমদের হাত থেকে রক্ষাকর্তা গোপাল মুখার্জী ওরফে গোপাল পাঁঠা সম্মন্ধে কিছু কথা।


চেনেন এনাকে?  কি বললেন... না। আপনার দোষ নয়। দোষ আমাদের ভাগ্যের।

ভারতমাতার এই সুসন্তানের নাম গোপাল মুখার্জী ওরফে গোপাল পাঁঠা। এই নামের কারন মেডিকাল কলেজের উল্টোদিকে কলেজস্ট্রীটে তার একটি বুচার শপ বা পাঁঠা কাটার দোকান ছিল। এখনো আছে সেই দোকান। অনুকূল মুখার্জীর পাঁঠা কাটার দোকান। 

এই গোপাল মুখার্জী ছিলেন বলে আপনি আছেন,  আমি আছি, হাওড়া ব্রিজ আছে, টালার ট্যাঙ্কি আছে, শিয়ালদহ স্টেশন আছে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল আছে আর কলকাতায় বসে এক ইতিহাস অজ্ঞ হিন্দু মহিলা মাথায় হিজাব লাগিয়ে মাঝে মাঝে বড় বড় লেকচার দিতে পারছেন। 

কিভাবে?? 
পিছিয়ে যেতে হবে অনেকগুলো বছর। ১৯৪৬ সাল। অবিভক্ত বাংলা। দায়িত্ব পেয়েছে মুসলিম লিগ। মুখ্যমন্ত্রীর নাম সুরাবর্দী। তিনি জিন্নার লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তানকে সাকসেস করার জন্য এক কঠিন ষড়যন্ত্র আঁটলেন। ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে - ১৬ আগস্ট ভোরবেলা মুসলমানেরা ধর্মতলা চৌরঙ্গীতে একত্রিত হলেন।  শুরু হল হিন্দু কাটা। আল্লাহু আকবর শব্দে ভরে গেল চারিপাশ আর জ্বলতে থাকল  হিন্দুদের সম্পত্তি। রাজাবাজারে স্কুলের সামনে চারটি মেয়েকে রেপ করে মেরে উলঙ্গ করে লটকে দেয়া হয়েছিল। সেই বিভৎসতা যে দেখেছে সেই জানে। একই সাথে পূর্ববঙ্গের নোয়াখালিতে চলতে লাগল অত্যাচার। মহিলাদের গনধর্ষন,  শরীর থেকে মাংস খুবলে নেয়া। সারা দিন ধরে অজস্র ঘটনার থানায় কমপ্লেন জমা পড়ল কিন্তু পুলিশ কোন স্টেপ নিল না। এভাবে পার হয়ে গেল তিন তিনটা দিন।

পরিস্থিতি একই। হিন্দুর লাশে গোটা কলকাতা ভরে গেল।  বামপন্থী কিছু নেতা যারা পাকিস্তানের দাবিতে মুসলিম লিগের পাশে দাঁড়িয়েছিল ঘটনার আকস্মিকতায় তারাও স্তম্ভিত হয়ে গেল। না কোন বিজেপি বা আর এস এস এর পেছনে ছিল না। কংগ্রেসের তোষনের রাজনীতিই ছিল এর জন্য দায়ী। আর এই ঘটনা যখন ঘটছে তখন গান্ধী আর জহরলাল ঘাপটি মেরে চুপ করে বসে রইলেন। 

তিন দিন হিন্দু হত্যার পর ক্ষেপে গেল গোপাল। সে এমন এক অসম লড়াই লড়ল যে সুরাবর্দীর সমস্ত পরিকল্পনা বানচাল হয়ে গেল। গোপাল আগে থেকেই অরবিন্দের ভাবশিষ্য ছিল। সে ছিল নির্ভিক ডাকাবুকো। একাই দশজনার সাথে লড়ার মত পেটানো শরীর ছিল তার। ৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সে সামিল ছিল। তার কাছে বেশ কিছু অস্ত্র ছিল। কিছু পিস্তল, কিছু বোমা, কিছু সোর্ড। কিন্তু কখনো তা কোন ক্রিমিনাল অ্যাকটিভিটিস এ ব্যবহার করেনি বা করতে দেয়নি গোপাল। রডা কোম্পানীর বন্দুকের দোকান লুঠ করল গোপাল তার দলবলকে নিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এদেশে আসা আমেরিকান সৈনিকদের  কাছ থেকে বোতল বোতল হুইস্কির বিনিময়ে আরো কিছু অস্ত্র জোগাড় করল গোপাল। তার পর একত্রিত করল প্রায় হাজারখানেক হিন্দু ও শিখ ছেলেকে। কিন্তু তাদের কয়েকটি কড়া নির্দেশ দিল। প্রথমত, অস্ত্রহীন মুসলমানকে মারবে না। উলটে সে প্রটেকশন চাইলে তাকে বা তার পরিবারকে প্রটেকশন দেবে। দ্বিতীয়ত মুসলিম মা বোনেদের দিকে মুখ তুলে তাকাবে না। কিন্তু অস্ত্রধারী মুসলমানকে ছাড়া চলবে না। ধড় থেকে তার মুন্ডু উপড়ানো চাই।

মাত্র দু তিন দিনে গোপালের বাহিনীর হাতে এত মুসলমান ঘাতক মরল যে সুরাবর্দীর দরবারে ত্রাহী ত্রাহী রব উঠে গেল। হরেন ঘোষ নামে এক গানের শিক্ষক ছিলেন যিনি সুরাবর্দির বাহিনীর কলকাতার মেজর পয়েন্টগুলো বোম চার্জ করে উড়িয়ে দেবার  ষড়যন্ত্র ধরে ফেললেন।  সুরাবর্দীর মেয়েকে তিনি গান শেখাতেন। সেখানে ছোট্ট মেয়েটি একটি কাগজ এনে হাজির করে। উনি প্রথমে বাজে কাগজ বলে মুড়ে ফেলে দেন পরে সেটা নিয়ে চুপ করে গোপালের কাছে তার বৌবাজারের বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখানে হাওড়া ব্রিজ, টালার জল ট্যাঙ্ক, ভিক্টোরিয়া, শিয়ালদা স্টেশন কিভাবে বোম মেরে উড়িয়ে দেবে তার প্ল্যান করা ছিল। গোপালের বাহিনী প্রতিটি জায়গা থেকে হামলাকারীদের হঠিয়ে দিল। পুলিশ বেগতিক দেখে সেই জায়গাগুলোর দখল নিল। সুরাবর্দীর সন্দেহ  গিয়ে পড়ল  হরেন বাবুর উপর এবং তার প্রান গেল মুসলিম গুন্ডাদের হাতে। তার শরীর কেটে ছয় টুকড়ো করা হয়। 

কংগ্রেসী নেতারা এতদিন ঘাপটি মেরে ছিল। যেই মুসলমান মরা শুরু হল সেই সবাই বউয়ের আঁচলের তলা থেকে বেড়িয়ে এল। গান্ধী বেড়িয়ে এল শয্যাসঙ্গীনীদের ছেড়ে আর জহরলাল বেড়িয়ে এল এডুইনার বেডরুম ছেড়ে।

সবাই মিলে গোপালকে হাজির করল গান্ধীর সামনে। গান্ধী বললেন গোপাল আমার পায়ে তুমি অস্ত্র সমর্পন কর। গোপাল বলল এতদিন এত হিন্দু মরছিল আপনি ঘুমাচ্ছিলেন, আমি আপনার কথা রাখতে পারব না। অস্ত্র যদি জমা দিতে হয়, নেতাজী সুভাষের আসার কথা আছে, ওর পায়ে দেব আপনার পায়ে নয়।

বেগতিক দেখে গান্ধী নোয়াখালী পালালো। সুরাবর্দী তখন আপিলের নাটক শুরু করল যে দাঙ্গা বন্ধ কর সবাই ভাই ভাই। প্রশাসন কড়া হল। ধীরে ধীরে সব থামল।  বেঁচে গেল কলকাতা। কিন্তু নোয়াখালী বাঁচল না। কারন  সেখানে  কোন  গোপাল পাঁঠা ছিল না। এই মানুষটি ও বেঁচে ছিলেন ২০০৩ সাল পর্যন্ত। তাকে সমঝে চলতেন  বিধান রায় সিদ্ধার্থ রায়ের মত লোকও। 

একবার কলকাতা পুলিশ তাকে দুটো রুটের পারমিট দিতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, গোপাল মুখার্জী ঘুষ নেয় না। কেউ তাকে নিয়ে লেখে নি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মত অর্ধসত্যবাদী অর্ধেক জীবনধারী সাহিত্যিকদের কাছে আমরা আর কি আশা করতে পারি??

তাকে নিয়ে বায়োপিক ও হবে না। কিন্তু যতদিন হিন্দুস্তান থাকবে, বাংলায় হিন্দুর ভিটে থাকবে, কলকাতা হিন্দুশূন্য না হবে একটা আত্মা এখানে চিরকাল বিরাজ করবে। গোপাল মুখার্জী ওরফে গোপাল পাঁঠা। এই লেখার মাধ্যমে আমার ছোট্ট শ্রদ্ধার্ঘ্য এই মহান ভারত সন্তানকে।

সংগৃহিত-ডাঃ ঈশান ঘোষ পরিমার্জিত স্বরূপ চট্টোপাধ্যায়।


The Great Calcutta Killing সম্মন্ধে আরো বিশদ বিবরণ পেতে গেলে এই ব্লগের নিম্নে উল্লেখিত পোস্টটি পড়ুন:

গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং ১৯৪৬, ১৬ই আগষ্টের এর ইতিহাস। History of "The Great Calcutta Killing" which was started on 16thAug'1946
পড়ুন ~ Read:
http://mamatimanushofwb.blogspot.com/2020/08/history-of-great-calcutta-killing-which.html


Please see other posts in this blog page by clicking "Home" or from "My Favorite Posts" / "Popular Posts" / "Archives" sections, and if any remarks please feel free to post.
Thanks & Jai Hind! Saroop Chattopadhyay.

1 comment:

  1. This is too good. Thanks for article. Have no words. Regards... 🚩

    ReplyDelete

Some recent posts

ভগবান রামচন্দ্র (রঘুবীর) ও ঠাকুর শ্রী রামকষ্ণ পরমহংস দেব, আর বর্তমানের সেক্যুলার (আসলে সিক কুলার) গণ।

শ্রীরামকৃষ্ণের কুলদেবতা ছিলেন ৺রঘুবীর। তিনি নিজে  দেবতার কবচ পরতেন, তাঁর পার্থিব শরীর পঞ্চভূতে লয় হওয়ার পরবর্তী সময়ে শ্রীমা সেই পবিত্র কব...