Tuesday, July 23, 2019

পশ্চিম বাংলায় শিক্ষকেরা এখন জীবন্ত লাশ। এক শিক্ষকের লেখা প্রতিবাদী কবিতা।

জীবন্ত লাশ !!

পথে সারি-সারি প'ড়ে আছে যেন 
        জীবন্ত সব লাশ ! 
অতি সযতনে মানব-জমিনে 
       এঁরাই করেন চাষ!!

সত্যিই তাঁরা পথে ব'সে আজ;
       চিনতে পারেন কেউ?
গোটা রাজ্যেই ছড়িয়ে প'ড়েছে  
       এ বিদ্রোহের ঢেউ !

এঁদের কেউবা দিদিমণি, আর 
      কেউ কেউ মাস্টার !
 হাতে থাকবার কথা টি.এল.এম.     
      চক আর ডাস্টার!

আজকে এঁরাই শুয়ে-ব'সে দেখি 
      খোলা রাস্তার 'পরে!
মানুষ গড়ার কারিগর এরা 
      দেখে চোখ জলে ভরে!


মাঝে মাঝে নানা বিদ্বজ্জন 
     পাশে দাঁড়িয়েছেন এসে;
তাদের কথায় গানে কবিতায় 
    মনটা গিয়েছে ভেসে!

"ন্যায্য পারিশ্রমিক পান না 
      সেটা সরকারি  দোষ!"
গলা উঁচু ক'রে বলে গিয়েছেন 
     কবি শ্রী শঙ্খ ঘোষ ! 

আমাদের এই দুরবস্থায় 
     অনেকেই এসেছেন : 
সমীর আইচ থেকে শুরু ক'রে     
       মন্দাক্রান্তা সেন !

এঁরা ছাড়াও বেশ কিছু রাজ-
        নৈতিক ব্যক্তিত্ব,
এসে পজিটিভ বক্তৃতাতেই 
       ভরিয়ে দিলেন চিত্ত !

কখনো বা ওমপ্রকাশ মিশ্র
        কখনো সব্যসাচী!
সরকার সেই কথা শুনলেই
       আমরা যে প্রাণে বাঁচি !

ধর্ণা-মঞ্চে এসেছেন শ্রী 
        সুজন চক্রবর্তী,
বক্তৃতাতেই করেছেন আজ 
        শূন্য এ মন ভর্তি!

ভারতী ঘোষও এসেছিলেন 
       শোনাতে আশার কথা !
সবাই ভাবেন ভাষণ শুনেই 
         ঘুচবে মনের ব্যথা !!

কাউকেই ছোট না করেও বলি 
       অনেক বছর আগে,
এই বঞ্চনা হয়েছিল শুরু 
      মনে সেই স্মৃতি জাগে !

সহানুভূতি দেখাননি কেউ 
        বাম-ডান সরকার, 
তাইতো আজও আমাদের মনে
        জমাট এ অন্ধকার !

বিরোধী দলে থাকলে সবাই 
       আশার কথাই বলে,
সংকটকালে ভোটগুলো চায়
       ছলে বলে কৌশলে !

মমতা ম্যাডাম থাকতেন যদি 
       আজকে বিরোধী দলে,
 আসতেন অনশনের মঞ্চে
         তিনিও সদলবলে !

আমরা এসব দেখে শুনে বেশ
       পারি আন্দাজ করতে,
নিজের স্বার্থে অনেকেই আসেন 
     ঘোলা জলে মাছ ধরতে!

যদিও আমরা চাই না এখানে 
      হোক কোনো রাজনীতি,
আসুন তাঁরাই, আমাদের প্রতি
      রয়েছে যাঁদের প্রীতি !

সকলের মুখে শুনি একই কথা 
      আমরা যে বঞ্চিত!
এত দিন ধ'রে অনশন ক'রে 
      তবু আজও লাঞ্ছিত !

আমরণ এই অনশন যবে
      অষ্টম দিনেতে পড়লো!
শিক্ষামন্ত্রী ডেকেছেন, শুনে 
     ভেবেছি টনক নড়লো !

অনেক আশা নিয়ে বেঁধেছিলাম 
       রিক্ত শূন্য বুক !
এ বৈঠকও দেখতে পেলো না
        প্রিয় সাফল্য-মুখ।

ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রী বোধহয় 
      এখনো সময় পাননি; 
তাই তিনি এই অনশন-স্থলে  
     একটি বারও যাননি!

এই রাজ্যের নানা জেলা থেকে
       শিক্ষিকা-শিক্ষক!
পালা করে একে-একে আসছেন
       ছেড়ে ডাস্টার-চক।

কেউ এসেছেন পিতা বা মাতার 
       মৃত্যুতে গুরুদশায় !
অস্বাস্থ্যকর অনশন-স্থলে
     ভরা যা মাছি ও মশায়!

মানব-দরদী সরকার, এখনো 
      তোমার কি চোখ অন্ধ? 
পানীয় জল যা পাচ্ছিলাম, তা
       কেন হয়ে গেল বন্ধ ?

এই অনশন-স্থলের কাছেই 
        সরকারি ক্যান্টিনে,
অনেক টিচার খাবার খেতেন 
        রাত্রে এবং দিনে !

কার অঙ্গুলি-হেলনে হঠাৎ 
      সেটাও যে হলো বন্ধ ! 
অনেকেই খুঁজে পাচ্ছেন এখানে 
         ষড়যন্ত্রের গন্ধ !!

ওগো মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী,
       আর তো সময় নাই ,
আন্দোলনে এবার আপনার 
        হস্তক্ষেপ চাই !!

একাধিকবার আমরা দেখেছি 
       তব মানবিক মুখ !
ন্যায্য বেতন চাইছি আমরা 
       কেউ নই ভিক্ষুক !

পি. আর. টি.-এর স্কেলটাই চাই     
         যোগ্যতাভিত্তিক !
এ আন্দোলন ভরিয়েছে তাই 
           রাজ্যে চতুর্দিক !!

আপনাকে পাশে পেয়েছে মানুষ
       সিঙ্গুরে নন্দীগ্রামে !
তবু কেন সাড়া নেই আপনার
        আমাদের সংগ্রামে ?

রাজ্যের যত প্রিয় প্রাথমিক 
         শিক্ষিকা শিক্ষক,
দেখেছি আমরা "আন্দোলন" আর 
         "মমতা" সমার্থক !

যদিও সমস্যাটার শুরু
      হয়েছিল বাম-আমলে,
 তখন আমাদের আন্দোলনের 
       সূত্রপাতটা হলে--

বিরোধী নেত্রী  আপনি তখন
      আমাদের পাশে থাকতেন!
হয়তো এমনই ধর্ণা-মঞ্চে 
      একসাথে রাত জাগতেন !

আপনার জ্বালাময়ী ভাষণেতে
       রুখতো তা কার সাধ্য ?
বাম সরকার পি.আর.টি.-এর 
       স্কেল দিতে হ'তো বাধ্য!

মাননীয়া ম্যাম, আপনাকে দেখে 
         শিখেছি আন্দোলন,
দাবি না মানলে করতেই হবে 
         আমরণ অনশন !

তাইতো আজকে ধর্ণা-মঞ্চে 
       হয়েছি যে সমবেত,
দীর্ঘদিনের সমস্যাটার 
       সমাধান অভিপ্রেত !

আজকে নবম দিনটাও পার 
      হয়ে গেল নিষ্ফল,
না কমে বেড়েছে এই অন-
       কারীদের মনোবল!!

আমরণ এই অনশন-ফলে
       হ'লেই কাউকে মরতে,
সারাটা জীবনে পারবেন ম্যাম 
       নিজেকেই ক্ষমা করতে ?

রুখতে ঘটনা দুঃখজনক 
       আপনার প্রিয় বঙ্গে !
বিষয়টা নিয়ে ভাবুন ম্যাডাম   
      সহানুভূতির সঙ্গে !

হাজার দিবস-রাত্রি কেটেছে 
      তীব্র বঞ্চনাতে ! 
সমস্যাটার সমাধান হোক
     ম্যাডাম, আপনার হাতে !!

শিক্ষক আন্দোলনে সেইটাই
      হয়ে যাক ইতিহাস !
নইলে ভবিষ্যতে আমাদের 
          সমূহ সর্বনাশ !!

Please view other posts in this blog page by clicking "Home" or from "My Favorite Posts" / "Popular Posts" / "Archives" sections, and if any remarks please feel free to post.  Thanks & Vande Mataram!! Saroop Chattopadhyay.

No comments:

Post a Comment

Some recent posts

ভগবান রামচন্দ্র (রঘুবীর) ও ঠাকুর শ্রী রামকষ্ণ পরমহংস দেব, আর বর্তমানের সেক্যুলার (আসলে সিক কুলার) গণ।

শ্রীরামকৃষ্ণের কুলদেবতা ছিলেন ৺রঘুবীর। তিনি নিজে  দেবতার কবচ পরতেন, তাঁর পার্থিব শরীর পঞ্চভূতে লয় হওয়ার পরবর্তী সময়ে শ্রীমা সেই পবিত্র কব...