Thursday, September 17, 2020

শুভ মহালয়া কথাটি ভুল, আজ সর্বপিতৃ অমাবস্যা। কোন আনন্দের দিন নয়।

আজ শুভ মহালয়া নয়। আজ 'সর্বপিতৃ অমাবস্যা'।

কোন কোন লোকজন শুভ মহালয়া বলছে তাদের কোন এক নদীর ধারে বসিয়ে খুর দিয়ে মাথা কামিয়ে মাথায় টুপি পড়িয়ে ছেড়ে দেওয়া হোক। মানুষের ন্যুনতম সাধারণ জ্ঞান বা নিজের ধর্মীয় আচার আচরণের সম্পর্কে জ্ঞান থাকে।

 আজ অমাবস্যা। পিতৃ পক্ষের শেষ দিন। পিতৃ অর্থে এখানে পূর্বপুরুষ। এক পক্ষকাল যাবৎ প্রতিদিন পিতৃ পুরুষের শ্রাদ্ধ হয়। আমাদের নিয়ম অনুযায়ী তিথিতে শ্রাদ্ধ হয় অর্থাৎ যে সপ্তমীতে মারা গেছে তার সপ্তমীতে, যে অষ্টমীতে শ্রাদ্ধ হয়।
 কিন্তু সব পূর্বপুরুষের তিথি জানা এবং সব দিনগুলোয় শ্রাদ্ধ করা সম্ভব নয় বলে অমাবস্যার দিন সবার জন্য শ্রাদ্ধ করা যায়। শ্রাদ্ধ মানে তর্পণ। পূর্বপুরুষের আত্মার উদ্দেশ্যে জল আর খাদ্যদ্রব্য নিবেদন করা হয় বা তর্পণ করা হয়। এই পুরো পিতৃ পক্ষ অত্যন্ত অশুভ বলে মনে করা হয়। কোন শুভ কাজ করতে নেই। আর আজ 'সর্বপিতৃ অমাবস্যা'। আজ সব পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ করা যায়। আজ কাউকে শুভেচ্ছা জানানো বা শুভ মহালয়া বলা সম্ভব?


 আজ দেবী দুর্গার আবাহনও হয় না। আমরা যেটা এত বছর ধরে রেডিওতে শুনছি সেটা চণ্ডীপাঠের অংশ। আগামীকাল প্রতিপদ থেকে শুরু হবে দেবী পক্ষ। দেবীর আবাহন কাল হওয়া উচিত। 

নব রাত্রি 
যারা পালন করে তারা সবাই প্রতিপদের দিন ভোরে দেবীর আবাহন করে ঘট স্থাপনা করে। আমি প্রথম বছর নবরাত্রি করার সময় মহালয়ায় ঘট স্থাপনা করতে গিয়ে প্রচুর ভর্ৎসনা খেয়েছিলাম। আমাদের শেখানোই হয় না কোন রীতিনীতি। এদিকে পুজো আসছে বলে আমরা যারা লাফাচ্ছি তারা পুজোয় কি কি খাব তার পরিকল্পনা করতে শুরু করি।

 কিছু বললেই বলবে 'আমি নাস্তিক'। (প্রসঙ্গতঃ জানিয়ে রাখি আমি আবার নাস্তিক না, নেহাত ছাপোষা ধর্মভীরু মানুষ। নাস্তিক হবার মত ধৃষ্টতা ও স্পর্ধা আমার নেই।) তা নাস্তিক যে কেউ হতে পারে। সে যে কোন দিন বিরিয়ানি খেতে পারে। তার তাকে পুজো নামক নেহাত ধর্মীয় আচারের অপেক্ষা কেন করতে হয় তার এখনও বোধগম্য হল না। হিন্দু ধর্ম যে এখনও আমাদের তার অন্তর্গত রেখেছে এই আমাদের পরম সৌভাগ্য। এখনও পর্যন্ত বলে নি যে বাঙ্গালী একপ্রকার ম্লেচ্ছ। কাল মধ্য রাত থেকে যারা ইনবক্সে শুভ মহালয়া লেখা আজগুবি সব শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছেন তাদের জন্য রইল ম্লেচ্ছ হবার শুভকামনা।
সকালে রেডিওতে মহালয়া হয় যে।
ওটা মহালয়া নয়। ওটা "মহিষাসুরমর্দিনী" নামের একটি অনুষ্ঠান। এর সঙ্গেও মহালয়া'র কোনো সম্পর্ক নেই। এই দিনে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার হয়, এই পর্যন্তই।

- তাহলে মহালয়াটা কি ?

- মহালয়া কথাটি এসেছে 'মহত্‍ আলয়' থেকে। হিন্দু ধর্মে মনে করা হয় যে পিতৃপুরুষেরা এই সময়ে পরলোক থেকে ইহলোকে আসেন জল ও পিণ্ডলাভের আশায়।প্রয়াত পিতৃপুরুষদের জল-পিণ্ড প্রদান করে তাঁদের 'তৃপ্ত' করা হয়। 

এর সঙ্গে দুর্গা পূজো নয়, মহাভারতের যোগ আছে।
 মৃত্যুর পর কর্ণের আত্মা পরলোকে গমন করলে তাঁকে খাদ্য হিসেবে স্বর্ণ ও রত্ন দেওয়া হয়েছিলো। কর্ণ এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তাঁকে বলা হয়, তিনি সারা জীবন স্বর্ণ ও রত্ন দান করেছেন, কিন্তু প্রয়াত পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কখনও খাদ্য বা পানীয় দান করেননি। তাই স্বর্গে খাদ্য হিসেবে তাঁকে সোনাই দেওয়া হয়েছে। বিমর্ষ কর্ণ বলেন, তাঁর পিতৃপুরুষ কারা সেটা তো তিনি মৃত্যুর মাত্র একদিন আগেই জানতে পেরেছেন। তার দোষ কোথায়! যমরাজ তখন বোঝেন, সত্যিই তো, এতে কর্ণের কোনো দোষ নেই। এই কারণে কর্ণকে পক্ষকালের জন্য ফের মর্ত্যে ফিরে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়! এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয়। 

আর সেই থেকেই হিন্দুদের মধ্যে তর্পণের প্রথা চালু হয়। 🙏
আপনার প্রিয়জনের শ্রাদ্ধের দিন কেউ যদি আপনাকে 'হ্যাপি আপনার বাপ-ঠাকুদ্দার শ্রাদ্ধ' বা 'শুভ শ্রাদ্ধ' বলে, আপনার কেমন লাগবে? 

না বুঝেই তো আমরা কতকিছু বলি। 

এই দিনটিতে কিন্তু "শুভ মহালয়া" বলা যাবে না।

#Collected

Please see other posts in this blog page by clicking "Home" or from "My Favorite Posts" / "Popular Posts" / "Archives" sections, and if any remarks please feel free to post. 
   Thanks & Vande Mataram!! Saroop Chattopadhyay.

No comments:

Post a Comment

Some recent posts

ভগবান রামচন্দ্র (রঘুবীর) ও ঠাকুর শ্রী রামকষ্ণ পরমহংস দেব, আর বর্তমানের সেক্যুলার (আসলে সিক কুলার) গণ।

শ্রীরামকৃষ্ণের কুলদেবতা ছিলেন ৺রঘুবীর। তিনি নিজে  দেবতার কবচ পরতেন, তাঁর পার্থিব শরীর পঞ্চভূতে লয় হওয়ার পরবর্তী সময়ে শ্রীমা সেই পবিত্র কব...