Thursday, February 8, 2018

'পদ্মাবৎ’(পদ্মাবতী) কে নিয়ে করে সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে আঁস্তাকুড়ে ফেলে দিয়ে কয়েকটি রাজ্য সরকার, দাঙ্গাবাজদের নিঃশব্দ মদত করে যায় আর কেন্দ্রীয় সরকার তাদের গোপন কর্মসূচীকে উৎসাহিত করতে, রাজ্য সরকারগুলিকে নীরব সমর্থন যায়.. এই চরম অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাই।


লেখক-অনুপ্লব ঘোষ

গত কয়েকদিন যাবত একটা মুক্তি প্রতীক্ষায় থাকা বা সদ্য মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র 'পদ্মাবৎ' কে কেন্দ্র করে, প্রায় সমগ্র উত্তর ভারত ও পশ্চিম ভারতে 'বিজেপি' শাসিত রাজ্যগুলিতে, যেভাবে সরকার ও দলীয় মদতে, সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে অমান্য করে, সাধারণ জনজীবনকে ব্যতিব্যস্ত ও বিপুল সামাজিক সম্পত্তিকে ধ্বংস করা গুন্ডামি চলছে, তাতে এই দেশের একজন বহুত্ববাদী ও সংস্কৃতিবান নাগরিক হিসাবে আমি আতঙ্কিত।


বাংলার মানুষ চিরকাল এইধরনের বিভাজনমূলক ও অপসংস্কৃতিমূলক শক্তির বিরুদ্ধে যুক্তিবাদী লড়াই চালাচ্ছে।

তাই, আপনাদের মাধ্যমেই দেশজুড়ে এই চরম অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদের হাতিয়ার স্বরূপ এই নিবন্ধ। 

একটা পদ্মাবৎ চলচ্চিত্র ও কিছু রাজ্য সরকার আশ্রিত গুন্ডার মস্তানি, যা আমার চেতনাকে গত কয়েকদিন ধরেই বারবার ধাক্কা দিচ্ছে। পদ্মাবতী একটা রাজস্থানী লোককথার স্ত্রী চরিত্র। তাকে নিয়ে একটা গল্পকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র। একে ঘিরে স্কুল বাসে আক্রমণ থেকে নিরীহ দোকানপাট ভাঙচুর। যেন দেশটা নাম বদলে "ভারতবর্ষ" থেকে "মগের মুলুক" হয়ে গেছে।         

আমার মন কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইছে, কিন্তু জবাব দেওয়ার লোক নেই। বিজেপি'র বকলম বা বি টিম, করণী সেনা বারবার বোঝাতে চাইছে, ইসলামিক আগ্রাসন কে প্রতিহত করতে পদ্মাবতীর আত্মাহুতি এক হিন্দু নারীর সতীত্বের গৌরবময় ইতিহাস। অর্থাৎ লড়াইটা এক অর্থে মুসলমানের বিরুদ্ধে হিন্দুর লড়াই। যেখানে হিন্দু আত্মমর্যাদার প্রশ্নে মরবে, কিন্তু মুসলমানের কাছে আত্মসমর্পণ করবেনা। অর্থাৎ, আজও আপনারা মুসলমানের বিরুদ্ধে একই মানসিকতাই পোষণ করুন।      

পদ্মাবতীর ঘটনাকাল কবে? ১৩০৩ খৃষ্টাব্দ। রূপকথার মতোই 'হীরামন' নামের একটা পাখীর মুখের কথিত গল্প, সম্পর্ক গড়ে দেয় রতন সিং আর পদ্মাবতীর মধ্যে। পদ্মাবতী - রতন সিং এর দ্বিতীয়া স্ত্রী। প্রথমা স্ত্রী 'নাগমতী'। বিজেপি! যাঁরা কিনা নীতিগত ভাবে তিন তালাকের প্রবল বিরোধী বলেই গলা ফাটিয়ে দাবি করেন, তাঁদের পদ্মাবতীর জন্যে চোখের জলে বুক ভেসে যায়। শুধু 'নাগমতী', ইতিহাসের অন্ধকারে নিঃশব্দে বিচার চায়। ওরা পদ্মাবতীর দূঃখে স্কুলবাস ভাঙে!! 

৭০০ বছর আগের একটা অলিখিত ইতিহাস। ২৫০ বছর পরে, ১৫৪০ খৃষ্টাব্দে 'পুদুমাবৎ' কাব্যে যার কাল্পনিক বিবরণ কবি দিয়েছেন। এর কোনও ঐতিহাসিক দলিল আজও অবধি কেউ কোথাও পায়নি। 
 
পুদুমাবৎ কাব্যের রচয়িতা কে
তাঁর নাম "মালিক মহম্মদ জায়েসী"। 

ধর্ম কি
মুসলমান। 

লিখলেন কার সতীত্বের বীরগাথা?
হিন্দু রাজপুত বধূ - 'পদ্মাবতীর' 

'পুদুমাবৎ' অনুসারে উগ্র হিন্দু রাজপুত ভাবাবেগে প্রভাবিত হয়ে, দোকান ভাঙছে কারা
বিজেপি'র বি টিম "করণী সেনা"। 

এই ইতিহাস কে পড়াবে ওদের

চিতোরগড়ের ফটক, রতন সিং এর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে, "আলাউদ্দিন খিলজী" কে চিনিয়েছিলো কে
সে মুসলমান নয়। 
একজন হিন্দু তন্ত্রপণ্ডিত রাঘব চেতন। 

 
হিন্দু পণ্ডিত বিশ্বাসঘাতকতা করলো, মুসলমান কবি দলিলহীন ইতিহাসের এক হিন্দু নারীর সতীত্বের লড়াইকে স্বীকৃত দিলো, আর বিজেপি (বকলম) সেই পদ্মাবতীর কাল্পনিক কাব্যকে গোবলয়ে ধর্মবিভাজনের আগুন জ্বালাবার রসদ বানালো। ভবিষ্যত এর বিচার করবে।    

যে দেশে একটা নির্দিষ্ট মতাদর্শ ক্ষমতার লক্ষ্যে, উগ্র হিন্দু ভাবাবেগ কে জাগিয়ে তুলতে শিশুর মুখের দুধ, গণেশ খাওয়ার নামে নর্দমা দিয়ে বইয়ে দেয়। 

যে দেশে একমাসের ঘটনাসমূহ দেখে অর্থমন্ত্রীকে কাগজে বিবৃতি দিয়ে বলতে হয়, ব্যাঙ্কে জনগণের টাকা সুরক্ষিত, গুজোবে কান দেবেন না। 

যে দেশে পানিহাটিতে সকালবেলা চকলেট বোমা পাওয়া গেলে, বিকেলবেলা রানীহাটিতে পরমাণু বোমা বলে প্রচার হয়। 

সেই দেশে ৭০০ বছর আগের একটা প্রমাণহীন জনশ্রুতিকে নিয়ে, কিছু অশিক্ষিত সমাজবিরোধী আগুন জ্বালাবে, এটাই স্বাভাবিক। 

কিন্তু দূঃখটা অন্য যায়গায়। যখন দেখি, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের 'পদ্মাবৎ' সংক্রান্ত রায়কে আঁস্তাকুড়ে ফেলে দিয়ে কয়েকটি রাজ্য সরকার, দাঙ্গাবাজদের নিঃশব্দ মদত করে, আর কেন্দ্রীয় সরকার তাদের গোপন কর্মসূচীকে উৎসাহিত করতে, রাজ্য সরকারগুলিকে নীরব সমর্থন দেয়।সম্ভবত একেই বলে "রাম রাজত্ব"। 

শুধু পার্থক্য এটাই :-

রাম রাজত্বে - 

একটা সীতা পোড়ে। 

 বিজেপির রাজত্বে - 

পুরো দেশ পোড়ে।  - অনুপ্লব ঘোষ

 

Please see other posts in this blog page by clicking "Home" or from "My Favorite Posts" / "Popular Posts" / "Archives" sections, and if any remarks please feel free to post.
Thanks & Vande Mataram!! Saroop Chattopadhyay.

No comments:

Post a Comment

Some recent posts

ভগবান রামচন্দ্র (রঘুবীর) ও ঠাকুর শ্রী রামকষ্ণ পরমহংস দেব, আর বর্তমানের সেক্যুলার (আসলে সিক কুলার) গণ।

শ্রীরামকৃষ্ণের কুলদেবতা ছিলেন ৺রঘুবীর। তিনি নিজে  দেবতার কবচ পরতেন, তাঁর পার্থিব শরীর পঞ্চভূতে লয় হওয়ার পরবর্তী সময়ে শ্রীমা সেই পবিত্র কব...