Sunday, July 19, 2020

সুহৃদ দত্ত- বেনিফিট অফ ডাউট। লেখক~ তাপস পরমানিক।।

আপনি কি সত্যিই তাপসী মালিককে ধর্ষণ করেছিলেন? সিপিএমের এত নেতা থাকতে কেন আপনার বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ উঠল? 

কারও বাড়িতে বসে এরকম প্রশ্ন করলে তিনি হয় লাঠিপেটা করবেন। নয় তো মা-মাসি উদ্ধার করে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেবেন। কিন্তু তিনি আমার কথা শুনে শুধুই মুচকি হাসলেন। কোনও তাপ উত্তাপ নেই। রাগ অভিমান নেই।

শান্ত ভাবে বললেন, ‘তাপসী মালিকের খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর এ রকম অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছে। জেলে ঢোকার পর প্রথম দিকে কয়েদিরাও আমাকে অনেক কটু কথা বলত। এখন আর গায়ে মাখি না।' 

অভিমানের সুর সুহৃদের গলায়।

কিছুক্ষণ চুপ। আবার বলা শুরু করলেন।

'আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল আদালতে তার কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি সিবিআই। নিম্ন আদালত দোষী সাব্যস্ত করলেও হাইকোর্ট আমাকে জামিন দিয়েছে। আমার জামিন খারিজ করার জন্য সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সেটা খারিজ করে দিয়েছে। আপিল মামলায় হাইকোর্টের শুনানিতে সিবিআইয়ের আইনজীবী দিনের পর দিন গরহাজির থাকছেন। জানি না এই মামলা কবে শেষ হবে।’ 

তাহলে বলছেন আপনার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা?

উল্টো দিক থেকে জবাব এল, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। টাটাদের প্রতিযোগীরা যে ন্যানো গাড়ির উৎপাদন ঠেকাতে চেয়েছিল। আমার কথায় বেশির ভাগ মানুষ কারখানার জন্য জমি দিতে এগিয়ে এসেছিলেন। সে জন্যই আমাকে বলির পাঁঠা করা হয়েছে।’
এক নিশ্বাসে বলে গেলেন কমরেড সুহৃদ দত্ত। 

তাপসী মালিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক সময় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। তাতে নাম জড়িয়ে যায় সুহৃদ দত্তের। তখন তিনি ছিলেন সিপিএমের সিঙ্গুর জোনাল সম্পাদক। ২০০৭ সালের জুন মাসে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হন সুহৃদ দত্ত এবং দেবু মালিক। প্রায় দু’বছর জেলে ছিলেন। তারপর ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারিতে জামিনে ছাড়া পান।

জেল থেকে ছাড়া পেলেও আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। অসুস্থতা তাঁকে গ্রাস করেছে। গোটা শরীরে বিষাক্ত ঘা। অনেক ডাক্তার দেখিয়েও রোগ ভালো করা যাচ্ছে না। লুঙ্গিটা খানিক উঠিয়ে পায়ের ঘা দেখিয়ে বললেন, ‘সিবিআই যখন আমার নারকো টেস্ট করায় তখন একটা ইনজেকশন দিয়েছিল। তার ঠিক পরের দিনই পায়ে র‍্যাশ বেরোয়। সেটা দেখতে অনেকটা ফোস্কার মতো। তা থেকেই সারা শরীরে ঘা ছড়িয়ে পড়ে। স্মৃতিশক্তিও অনেকটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন অনেক কিছুই মনে রাখতে পারি না।’

সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো কারখানা যেখানে তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জলাপাড়া এলাকা। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নেমে পিচের রাস্তা ধরে যাওয়ার পর সরু গলির মধ্যে সুহৃদ দত্তদের পৈতৃক বাড়ি। সুহৃদ দত্তের বাড়ি যাব বলতেই এক সহৃদয় ব্যক্তি দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। 

পাঁচিল ঘেরা সুন্দর ছিমছাম দোতলা বাড়ি। গেরুয়া রং। পাঁচিল দিয়ে ঢুকেই চোখে পড়ল গেটের সামনে ঝুলছে ফ্রেমে বাঁধানো শ্রীকৃষ্ণের ছবি। বাড়ির গেরুয়া রং আর শ্রীকৃষ্ণের ছবি দেখে ঝটকা লাগলো।

কলকাতা থেকে সাংবাদিক দেখা করতে এসেছে শুনে গুটি-গুটি দোতলা থেকে নীচে নামলেন সত্তরোর্ধ্ব মানুষটি। তার পর নিয়ে গেলেন পাশের ঘরে। ঘরের দেওয়ালে ঝুলছে মার্কস, এঙ্গেলস, রবীন্দ্রনাথ, লেনিন ও স্ট্যালিনের বাঁধানো ছবি। ঘরে ছোট্ট তক্তপোশ। কয়েকটা কাঠের চেয়ার আর একটা টেবিল। 

কথা বলার ফাঁকে তাঁর কাছ থেকেই জানতে পারলাম, বাড়িতে আপনজন বলতে কেউ নেই। এক সময় চাকরি করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে হয়ে যান সিপিএমের সর্বক্ষণের পার্টি কর্মী। বললেন, 'দল করতে গিয়ে বিয়ে করার কথা মাথায় আসেনি। বলতে পারেন, আমি ঝাড়া হাত পা। ভাই বোনেদের সংসারে থাকি।'   

তাপসী মালিকের নাম উচ্চারণ করতেই সবিনয়ে বললেন, ‘আমাকে একটু সময় দিতে পারবেন? তা হলে আপনাকে কিছু জিনিস দেখাতে পারি।’ বলেই উঠে গেলেন দোতলায়। 

কিছুক্ষণ পর একটা মোটা কাগজের বান্ডিল নিয়ে হাজির হলেন। তার মধ্যে কোনওটা চার্জশিটের কপি। কোনওটা আবার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট। কয়েকটা জেরক্স কপি হাতে ধরিয়ে বললেন, আগে এটা ভাল করে পড়ে দেখুন।

সেই  কাগজে চোখ বোলাতে গিয়ে এক জায়গায় দৃষ্টি আটকে গেল। তাপসীর মৃত্যুরহস্য নিয়ে সিবিআই ক্রাইম ব্রাঞ্চের সুপারিন্টেডেন্টকে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালের ফরেনসিক এবং স্টেট মেডিসিনের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এ কে গুপ্তা। সেই রিপোর্টের এক জায়গায় তিনি বলছেন: The appearance of the external os and the cavity of the uterus as seen by me on reviewing the video cassette appears to be in conformity with a case of abortion in recent past. 
In absence of the report of verginal swab and smear i.e whether spermatozoa or seminal fluid or DNA of a male sbject are detected in them, it is not possible to opine definitely whether she was sexually violated in recent past i.e prior to death. However further report may be submitted after receiving the above mentioned report. 

Considering the findings in the post-mortem report, the findings observed by me on reviewing of video cassette on post-mortem examination of Tapasi Malik and visit to the place of detection of dead body of Tapasi Malik. I am finally opine that death of Tapas Malik was due to the effects of ante-mortem burn injuries which were in probability homicidal in nature as she was put to flame after incapacitating her by causing ante-mortem injuries especially heamatoma (extravasation) over her head. 

তার বাংলা তর্জমা করলে এটাই মানে দাঁড়ায় যে, মৃত্যুর কয়েক দিন আগেই তার অ্যাবরশন করানো হয়েছিল। তার যৌনাঙ্গে শুক্রাণু বা সেমিনাল তরল বা পুরুষের ডিএনএ পাওয়া যায়নি।
কাগজের পাতা ওল্টাতে গিয়ে দেখতে পেলাম, বেশ কয়েকটি লাইনের উপর সবুজ মার্কার দিয়ে দাগ করা রয়েছে। সেটা দেখিয়ে সুহৃদ দত্ত বললেন, 'কি কিছু বুঝলেন? আপনারা তো এসব লিখবেন না।'
কিছুটা অনুযোগের সুরেই বললেন, 'তখন তো লোকে কত কথাই বলেছিল। আমার দলের লোকেরাও অনেকে সন্দেহ করেছিল। একটা মিথ্যা অভিযোগে আমাকে জেল খাটতে হয়েছে। তাতে আমার কোনও দুঃখ নেই। তাতেও যদি ওরা কারখানাটা করতে দিত, আমি সব থেকে খুশি হতাম। সেটাই তো করা গেল না।'

'বিনা দোষে' জেল খাটার জন্য বিরোধীদের ষড়যন্ত্রকে দায়ী করলেও সিঙ্গুর থেকে ন্যানো বিদায়ের জন্য নিজের দলকেই কাঠগড়ায় তুললেন। বললেন, ‘আমরা মানুষকে বোঝাতে পারিনি, এটা আমাদের দলের ব্যর্থতা। আমি নিজেও টাটার কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে বলেছিলাম, সিঙ্গুরে যখন আপত্তি উঠছে আপনারা অন্য জায়গায় কারখানাটা করছেন না কেন? কিন্তু তাঁরা এত সুন্দর জায়গা হাতছাড়া করতে চাননি। বিরোধীদের চক্রান্তের মোকাবিলা করতেও আমাদের সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তার ফল ভুগতে হচ্ছে সিঙ্গুরের মানুষকে। কারখানাও হল না। চাষিরা জমি ফেরত পেলেও তাতে চাষ করাও যাচ্ছে না! যারা একসময় টাটাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল তারাই এখন আপশোস করছে।’

Please see other posts in this blog page by clicking "Home" or from "My Favorite Posts" / "Popular Posts" / "Archives" sections, and if any remarks please feel free to post. 
Thanks & Jai Hind!! Saroop Chattopadhyay.

Thursday, July 9, 2020

Is it appropriate to call Mahatma Gandhi (Mohandas Karamchand Gandhi) as Father of the Nation (Bapu) of India??🙏🏽

I really don't understand why some of you call Mahatma Gandhi as Father of Nation (Desh ka Baapu).

Mohandas Karamchand Gandhi was not even Patriotic not even Courageous who can fight against British. He used Non-Violence to fight against British but we all know that how we became independent. Not because of Non-Violence but we became independent by Violence.  Everyone living in India is son and daughter of Motherland. Hence, he is also a son of our Motherland not any father...

Before saying him Father of nation just remember some of this simple questions...

*When did our Bharat Mata married???
*Did Bharat Mata marry Gandhi???
*How can he take any place of God???
*Is he even qualified to be called as God???
*Are we not criticizing other great hero's who were Patriotic and Courageous, who lost their life for our independence???

We usually see that there are various debates shown about this and that but I don't understand why they don't take topic about Mahatma Gandhi who destroyed our country...

Not only Gandhi, after Foundation of Congress Government at 1885 was also the main cause of destruction at our India...

Here are some Important facts I got-

JM Upadhyaya, Principal at the High School in Rajkot where the Mahatma had spent seven years, wrote a book ‘Mahatma Gandhi as a Student’ that got published in 1965. It has a collection of memories of Gandhi’s performance in school. Before reaching the age of 10, Gandhi changed several schools. The records in  the books also tell about the father of our nation being mediocre in his school curriculum.

The book talks about his short attendance and average marks. There are instances mentioned in the book that show his attendance was noticeably lax: a mere 110 days out of 238 in Standard III and his marks at the annual examinations normally averaged between 45 per cent and 55 per cent. 

In the same book, the author has mentioned the time when Gandhi paid his first visit to Ahmadabad to take the Matriculation Examination of the Bombay University. The author has given full details: Gandhi’s examination number was 2275. There were 3,067 candidates in all. Of these 799 were successful. Gandhi’s own rank was 404th, and his marksheet is shown on the photo below...

With this Mohandas K. Gandhi was a student with a total of 247.5 marks out of 625 that comes to an average of about 40 per cent.

When I googled about him deeply, I got his marksheet of standard 10. So he was just a average student...

Now coming to to most important part of the history which is "Is it Gandhi-Neheru & Co gives us (Indians) Freedom"?
Answer is simply "NO".
Sir Clement Attlee, the then British Prime Minister was very specific in stating the reasons why the British left India.

I always said:
INDIA DIDN'T GET FREEDOM DUE TO FREEDOM BEGGARS, INSTEAD INDIA EARNED IT'S FREEDOM DUE TO FIGHT AND SACRIFICES OF OUR FREEDOM FIGHTERS.

Battle for India's freedom started with the Sepoy Uprising of Mangal Pandey.
Then there were revolutionaries like Khudiram Bose, Benoy,Badal & Dinesh , Shaheed Bhagat Singh, Rajguru & many others who sacrificed their lives by going to the gallows.
Mahatma Gandhi's non-violent movement had "MINIMAL" contribution.


But the final onslaught on British imperialism was none other than the battle of the #AzadHindFauj under the leadership of #NetajiSubhasChandraBose & subsequent INA trials held at the RedFort which completely destroyed the loyalty & allegiance of the British forces to the British empire. Britain realised then that they have to relinquish India.


This is my opinion about Gandhi and I also don't take him as Father of nation( I already said you the reasons). According to Article 18 there is Abolition of Title so no one can force me to call him Father of Nation...

Thank You🙏 

Please see other posts in this blog page by clicking "Home" or from "My Favorite Posts" / "Popular Posts" / "Archives" sections, and if any remarks please feel free to post. 

Jai Hind & Vande Mataram!! Saroop Chattopadhyay.

Saturday, July 4, 2020

স্বামী বিবেকানন্দের দেহত্যাগ.. ৪ঠা জুলাই, ১৯০২ শুক্রবার।। কি হয়েছিল সেদিন... স্বামীজির শেষ লীলা কেমন ছিল? সেদিন কিরকম ছিলেন গুরুগতপ্রাণা‚ ত্যাগতিতিক্ষানুরাগিণী বিদেশিনী তপস্বিনী নির্জনবাসিনী নিবেদিতা।।

৪ঠা জুলাই, ১৯০২ শুক্রবার।
ভোরবেলা ঘুম ভাঙল বিবেকানন্দের। তাকালেন ক্যালেন্ডারের দিকে। আজই তো সেই দিন। আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস। আর আমার দেহত্যাগের দিন। 
মা ভুবনেশ্বরী দেবীর মুখটি মনে পড়ল তাঁর। ধ্যান করলেন সেই দয়াময় প্রসন্ন মুখটি। বুকের মধ্যে অনুভব করলেন নিবিড় বেদনা ।
তারপর সেই বিচ্ছেদবেদনার সব ছায়া সরে গেল।

ভারী উৎফুল্ল বোধ করলেন বিবেকানন্দ। মনে নতুন আনন্দ, শরীরে নতুন শক্তি। তিনি অনুভব করলেন, তাঁর সব অসুখ সেরে গিয়েছে। শরীর ঝরঝর করছে। শরীরে আর কোনো কষ্ট নেই।
মন্দিরে গেলেন স্বামীজি। ধ্যানমগ্ন উপাসনায় কাটালেন অনেকক্ষন। আজ সকাল থেকেই তাঁর মনের মধ্যে গুন গুন করছে গান। অসুস্থতার লক্ষন নেই বলেই ফিরে এসেছে গান, সুর, আনন্দ। তাঁর মনে আর কোনও অশান্তি নেই। শান্ত , স্নিগ্ধ হয়ে আছে তাঁর অন্তর।

উপাসনার পরে গুরুভাইদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করতে করতে সামান্য ফল আর গরম দুধ খেলেন। বেলা বাড়ল। সাড়ে আটটা নাগাদ প্রেমানন্দকে ডাকলেন তিনি। বললেন, আমার পুজোর আসন কর ঠাকুরের পূজাগৃহে। সকাল সাড়ে নটায় স্বামী প্রেমানন্দও সেখানে এলেন পূজা করতে। 

বিবেকানন্দ একা হতে চান ।
প্রেমানন্দকে বললেন‚ আমার ধ্যানের আসনটা ঠাকুরের শয়নঘরে পেতে দে। এখন আমি সেখানে বসেই ধ্যান করব।  অন্যদিন বিবেকানন্দ পুজোর ঘরে বসেই ধ্যান করেন। আজ ঠাকুরের শয়নঘরে প্রেমানন্দ পেতে দিলেন তাঁর ধ্যানের আসন।

চারদিকের দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিতে বললেন স্বামীজি।
বেলা এগারোটা পর্যন্ত ধ্যানে মগ্ন রইলেন স্বামীজি। ধ্যান ভাঙলে ঠাকুরের বিছানা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে বেরিয়ে এলেন তিনি --
     মা কি আমার কালো,
     কালোরূপা এলোকেশী
     হৃদিপদ্ম করে আলো।।

তরুন সন্ন্যাসীর রূপের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে গুরুভাইরা।
বেলা সাড়ে এগারোটার মধ্যেই দুপুরের খাওয়া সারতে বললেন বিবেকানন্দ। আজ নিজে একলা খাচ্ছেন না। খেতে বসলেন সবার সঙ্গে।।

সকালবেলা বেলুড়ঘাটে জেলেদের নৌকো ভিড়েছিল। নৌকোভর্তি গঙ্গার ইলিশ। স্বামীজির কানে খবর আসতেই তিনি মহাউত্‍সাহে ইলিশ কিনিয়েছেন। তাঁরই আদেশে রান্না হয়েছে ইলিশের অনেকরকম পদ। গুরুভাইদের সঙ্গে মহানন্দে ইলিশভক্ষনে বসলেন বিবেকানন্দ।

তিনি জানেন, আর মাত্র কয়েকঘন্টার পথ তাঁকে পেরোতে হবে। ডাক্তারের উপদেশ মেনে চলার আর প্রয়োজন নেই। জীবনের শেষ দিনটা তো আনন্দেই কাটানো উচিত।
"একাদশী করে খিদেটা খুব বেড়েছে। ঘটিবাটিগুলোও খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।" বললেন স্বামীজি। পেট ভরে খেলেন ইলিশের ঝোল, ইলিশের অম্বল, ইলিশ ভাজা।।

দুপুরে মিনিট পনেরো বিছানায় গড়িয়ে নিয়ে প্রেমানন্দকে বললেন, সন্ন্যাসীর দিবানিদ্রা পাপ। চল, একটু লেখাপড়া করা যাক। বিবেকানন্দ শুদ্ধানন্দকে বললেন‚ লাইব্রেরি থেকে শুক্লযজুর্বেদটি নিয়ে আয় ।
তারপর হঠাৎ বললেন‚ এই বেদের মহীধরকৃতভাষ্য আমার মনে লাগে না |
আমাদের দেহের অভ্যন্তরে মেরুদণ্ডের মধ্যস্থ শিরাগুচ্ছে‚ ইড়া ও পিঙ্গলার মধ্যবর্তী যে সুষুন্মা নাড়িটি রয়েছে‚ তার বর্ণনা ও ব্যাখ্যা আছে তন্ত্রশাস্ত্রে। আর এই ব্যাখ্যা ও বর্ণনার প্রাথমিক বীজটি নিহিত আছে বৈদিক মন্ত্রের গভীর সংকেতে। মহীধর সেটি ধরতে পারেননি।

বিবেকানন্দ এইটুকু বলেই থামলেন ।
এরপর দুপুর একটা থেকে চারটে পর্যন্ত তিনঘন্টা স্বামীজী লাইব্রেরী ঘরে ব্যাকরণ চর্চা করলেন ব্রহ্মচারীদের সঙ্গে।
তিনি পাণিনির ব্যাকরণের সূত্রগুলি নানারকম মজার গল্পের সঙ্গে জুড়ে দিতে লাগলেন। ব্যাকরণশাস্ত্রের ক্লাস হাসির হুল্লোড়ে পরিণত হল ।
ব্যাকরনের ক্লাস শেষ হতেই এক কাপ গরম দুধ খেয়ে প্রেমানন্দকে সঙ্গে নিয়ে বেলুড় বাজার পর্যন্ত প্রায় দু মাইল পথ হাঁটলেন।।

এতটা হাঁটা তাঁর শরীর ইদানিং নিতে পারছে না। কিন্তু  ১৯০২ এর ৪ ঠা জুলাইয়ের গল্প অন্যরকম।  কোনও কষ্টই আজ আর অনুভব করলেন না। বুকে এতটুকু হাঁফ ধরল না। আজ তিনি অক্লেশে হাঁটলেন।। 

বিকেল পাঁচটা নাগাদ মঠে ফিরলেন বিবেকানন্দ। সেখানে আমগাছের তলায় একটা বেঞ্চি পাতা। গঙ্গার ধারে মনোরম আড্ডার জায়গা। স্বামীজির শরীর ভাল থাকে না বলে এখানে বসেন না। আজ শরীর -মন একেবারে সুস্থ। তামাক খেতে খেতে আড্ডায় বসলেন বিবেকানন্দ।
আড্ডা দিতে দিতে ঘন্টা দেড়েক কেটে গেল। সন্ধ্যে সাড়ে ছ'টা হবে । সন্ন্যাসীরা কজন মিলে চা খাচ্ছেন। স্বামীজি এক কাপ চা চাইলেন।

সন্ধ্যে ঠিক সাতটা। শুরু হলো সন্ধ্যারতি। স্বামীজি জানেন আর দেরি করা চলবে না। শরীরটাকে জীর্ন বস্ত্রের মতো ত্যাগ করার পরমলগ্ন এগিয়ে আসছে।
তিনি বাঙাল ব্রজেন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন । ব্রজেন্দ্রকে বললেন , "আমাকে দুছড়া মালা দিয়ে তুই বাইরে বসে জপ কর। আমি না ডাকলে আসবি না।"

স্বামীজি হয়তো বুঝতে পারছেন যে এটাই তাঁর শেষ ধ্যান।
তখন ঠিক সন্ধ্যে সাতটা পঁয়তাল্লিশ । স্বামীজি যা চেয়েছিলেন তা ঘটিয়ে দিয়েছেন। ব্রজেন্দ্রকে ডাকলেন তিনি। বললেন , জানলা খুলে দে । গরম লাগছে।
মেঝেতে বিছানা পাতা। সেখানে শুয়ে পড়লেন স্বামীজি। হাতে তাঁর জপের মালা ।
ব্রজেন্দ্র বাতাস করছেন স্বামীজিকে স্বামীজি ঘামছেন। বললেন , আর বাতাস করিসনে। একটু পা টিপে দে। রাত ন'টা নাগাদ স্বামীজি বাঁপাশে ফিরলেন। তাঁর ডান হাতটা থরথর করে কেঁপে উঠল। 

কুন্ডলিনীর শেষ ছোবল। বুঝতে পারলেন বিবেকানন্দ । শিশুর মতো কাঁদতে লাগলেন তিনি । দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। গভীর সেই শ্বাস। মাথাটা নড়ে উঠেই বালিশ থেকে পড়ে গেল।  ঠোঁট আর নাকের কোনে রক্তের ফোঁটা। দিব্যজ্যোতিতে উজ্জ্বল তাঁর মুখ। ঠোঁটা হাসি।।

ঠাকুর তাঁকে বলেছিলেন , "তুই যেদিন নিজেকে চিনতে পারবি সেদিন তোর এই দেহ আর থাকবে না ।"
স্বামীজি বলেছিলেন , 'তাঁর চল্লিশ পেরোবে না ।'
বয়েস ঠিক উনচল্লিশ বছর পাঁচ মাস, চব্বিশ দিন ।

পরের দিন ভোরবেলা ।

একটি সুন্দর গালিচার ওপর শায়িত দিব্যভাবদীপ্ত‚ বিভূতি-বিভূষিত‚ বিবেকানন্দ। তাঁর মাথায় ফুলের মুকুট ।
তাঁর পরনে নবরঞ্জিত গৈরিক বসন ।
তাঁর প্রসারিত ডান হাতের আঙুলে জড়িয়ে আছে রুদ্রাক্ষের জপমালাটি ।
তাঁর চোখদুটি যেন ধ্যানমগ্ন শিবের চোখ‚ অর্ধনিমীলিত‚ অন্তর্মুখী‚ অক্ষিতারা। নিবেদিতা ভোরবেলাতেই চলে এসেছেন। স্বামীজির পাশে বসে হাতপাখা দিয়ে অনবরত বাতাস করছেন। তাঁর দুটি গাল বেয়ে নামছে নীরব অজস্র অশ্রুধারা।। স্বামীজির মাথা পশ্চিমদিকে। পা-দুখানি পুবে‚গঙ্গার দিকে।

শায়িত বিবেকানন্দের পাশেই নিবেদিতাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সেই গুরুগতপ্রাণা‚ ত্যাগতিতিক্ষানুরাগিণী বিদেশিনী তপস্বিনীর হৃদয় যেন গলে পড়ছে সহস্রধারে। আজকের ভোরবেলাটি তাঁর কাছে বহন করে এনেছে বিশুদ্ধ বেদনা। অসীম ব্যথার পবিত্র পাবকে জ্বলছেন‚ পুড়ছেন তিনি।। এই বেদনার সমুদ্রে তিনি একা।

নির্জনবাসিনী নিবেদিতা।।

বিবেকানন্দের দেহ স্থাপন করা হল চন্দন কাঠের চিতায়। আর তখুনি সেখানে এসে পৌঁছলেন জননী ভুবনেশ্বরী।
চিৎকার করে কাঁদতে- কাঁদতে লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে ।
কী হল আমার নরেনের ?
হঠাৎ চলে গেল কেন ?
ফিরে আয় নরেন‚ ফিরে আয় ।
আমাকে ছেড়ে যাসনি বাবা ।
আমি কী নিয়ে থাকব নরেন ?
ফিরে আয়। ফিরে আয়।।

সন্ন্যাসীরা তাঁকে কী যেন বোঝালেন ।
তারপর তাঁকে তুলে দিলেন নৌকায় ।
জ্বলে উঠল বিবেকানন্দের চিতা।
মাঝগঙ্গা থেকে তখনো ভেসে আসছে ভুবনেশ্বরীর বুকফাটা কান্না ।
ফিরে আয় নরেন ফিরে আয় ।
ভুবনেশ্বরীর নৌকো ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।
তাঁর কান্না‚ ফিরে আয় নরেন‚ ফিরে আয়‚ ভেসে থাকল গঙ্গার বুকে।

নিবেদিতা মনে মনে ভাবলেন‚ প্রভুর ওই জ্বলন্ত বস্ত্রখণ্ডের এক টুকরো যদি পেতাম !
সন্ধে ছটা ।
দাহকার্য সম্পন্ন হল । আর নিবেদিতা অনুভব করলেন‚ কে যেন তাঁর জামার হাতায় টান দিল । তিনি চোখ নামিয়ে দেখলেন‚ অগ্নি ও অঙ্গার থেকে অনেক দূরে‚ ঠিক যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি‚ সেখানেই উড়ে এসে পড়ল ততটুকু জ্বলন্ত বস্ত্রখণ্ড যতটুকু তিনি প্রার্থনা করেছিলেন । নিবেদিতার মনে হল‚ মহাসমাধির ওপার থেকে উড়ে-আসা এই বহ্নিমান পবিত্র বস্ত্রখণ্ড তাঁর প্রভুর‚ তাঁর প্রাণসখার শেষ চিঠি।।

#সংগৃহীত #ফেসবুক #এনজি

আমার আগের লেখা স্বামীজি নিয়ে:

wami Vivekananda was an Avtar in all sense.. Here is a short evaluation (although I'm not capable to evaluate such a great personality) of Swami Vivekananda who is truly an Avtar, Saint, Philosopher. A humble tribute to Swamiji by me.
--- A tribute to Swamiji by me plz click this link for full article.

https://mamatimanushofwb.blogspot.com/2016/01/swami-vivekananda-was-avtar-in-all.html?m=0


Please look at other posts in this blog page by clicking "Home" or from "My Favorite Posts" / "Popular Posts" / "Archives" sections, and if any remarks please feel free to post. Thanks & Jai Hind!! 
Joy Thakur
Joy Maa
Joy Swamiji
Saroop Chattopadhyay.

Some recent posts

ভগবান রামচন্দ্র (রঘুবীর) ও ঠাকুর শ্রী রামকষ্ণ পরমহংস দেব, আর বর্তমানের সেক্যুলার (আসলে সিক কুলার) গণ।

শ্রীরামকৃষ্ণের কুলদেবতা ছিলেন ৺রঘুবীর। তিনি নিজে  দেবতার কবচ পরতেন, তাঁর পার্থিব শরীর পঞ্চভূতে লয় হওয়ার পরবর্তী সময়ে শ্রীমা সেই পবিত্র কব...