এই কিছুদিন আগেই সৎমা-রক্তমাটি-অমানুষের সরকার তৃতীয় বার জিতে ক্ষমতায় এসেছে। বৈশাখের এক সন্ধ্যায় এক মধ্যবিত্ত রামকৃষ্ণ বাবুর বাড়ির ঘটনা....
"শাঁখটা আস্তে বাজা মা, ওরা নাহলে রাগ করবে" কথাটা শেষ করে রামকৃষ্ণ বাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। মেয়েটাও ভয়ে ভয়ে শাঁখটা রেখে দেয়। রামকৃষ্ণ বাবুরা এমনিতেই এখানে সংখ্যায় কম হয়ে গেছে শেষ কমাসে প্রচুর রোহিঙ্গা এই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার ফলে। তার উপর সৎমা-রক্তমাটি-অমানুষের তৃতীয় দফার সরকার বলে দিয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এসব ছোটখাটো বিষয় মেনে নিতে হবে। এইতো সেদিনই একদল এসে বলে গেলো সন্ধ্যাবেলা প্যাঁ প্যাঁ করে অত শাঁখ বাজানোর কী আছে? আর তাছাড়া দুবেলা মাইকে তো বাজানো হয় সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব। তারপর আবার এসব কেন? শাঁখ বাজাবেন না। গতবছর থেকে পাড়ায় আর সরস্বতী পুজোও হয় না। কী একটা দিবস পালন হয়। কালীপূজা সহ বাকি পুজোয় ঢাকও নিষিদ্ধ হয়েছে। তাদের নাকি খুব বিরক্ত লাগে ঢাকের শব্দ। এখান রামকৃষ্ণ বাবুর স্বজাতির ছেলেগুলো চালাকি করে দুটো করে মাটির প্রতিমা তৈরি করে। একটা বাইরে রাখা থাকে। ওরা এসে ভেঙে যায়। তারপর লুকিয়ে তৈরি করা মূর্তিটার পুজো হয়। এসব ব্যাপারে ক্ষমতায় থাকা সরকার বলে দিয়েছে এসব ছোট ঘটনা। পুলিশ পদক্ষেপ নেবে না। তাছাড়া অতো ধর্মান্ধ হলে চলে না।
ওদিকে টিউশন থেকে ফেরার পথে আজও রামকৃষ্ণ বাবুর ছোট মেয়েটার হাত ধরে টেনেছে দুষ্টু ছেলেরা। আব্দুলের বহুদিন ধরেই মেয়েটার দিকে নজর। রামকৃষ্ণ বাবু হার্ডকোর সেকুলার। ওনাকে আব্দুল বলে গেছে দ্যাখেন আপনার বিটিরে আমার চাই অন্তত দুবছরের জন্য। তারপর ফেরত করে দেবো নাহয়। আব্দুল শাসক দলের যুব সংগঠনের জেলা সভাপতি। আব্দুলের পায়ের কাছে পুলিশ বসে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই পুলিশেকোন গৃহীত হবে না। বংশানুক্রমিক সর্বহারা পার্টির সদস্য কৌশিক একটু দূরে বসে ছিল। সব শুনে রামকৃষ্ণ বাবুর কৌশিকের বক্তব্য আরে সংখ্যালঘু মানুষ এইটুকু আবদার করতেই পারে। আপনি কিন্তু বেশি কঠোর হচ্ছে।
যদিও এখন কৌশিক পাগলের মতো এর তার দরজায় ছুটে বেড়াচ্ছে। কারণ ওর বোনকে আব্দুলের ডানহাত সাজিদ গত পরশু দিন তুলে নিয়ে গেছে। পুলিশে অভিযোগ হয়েছে কিন্তু পুলিশের আব্দুলদের ডেরায় ঢোকার সাহস হয়নি। পুলিশ বলেছে দেখছি।
শূন্য মনে টিভি চালিয়ে রামকৃষ্ণ বাবু দেখছেন সরকার নতুন পদ্ধতি তে চাকরির আয়োজন করেছে।
সদ্য গ্র্যাজুয়েট হওয়া ছেলেটাকে ডেকে রামকৃষ্ণ বাবু ডিলেটস শুনতে বললেন।
টিভিতে তখন রাজ্যের নতুন অঘোষিত সম্রাট তথা যুবরাজ বলছেন গরীব মানুষ চাকরি করে কী করবে? তাছাড়া ওই ফর্ম ফিলাম পরীক্ষা নেওয়া অনেক ঝামেলার ব্যাপার। ওসব না করে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরাসরি চাকরি নিলাম হবে। রেট শুরু ১৫ লাখ থেকে গ্রুপ ডি এর জন্য। পোস্ট হিসাবে দাম বাড়বে চাকরির।
স্তব্ধ রামকৃষ্ণ বাবু রাগে টিভিটাই ভেঙে ফেলতে গেলেন। অশ্রুসজল নয়নে ছেলেটা রামকৃষ্ণ বাবুকে আটকে বললে রাগ কোরো না বাবা এরজন্য তুমিও দায়ী। ভোটের আগে বলেছিলাম এই সরকার চাকরি দেয় না। তাই একটা পরিবর্তন দরকার। তুমি বলেছিল এই সরকারই থাক। বিরোধী দল এলে রাজ্যেটা শ্মশান হয়ে যাবে। খুব খারাপ হবে। কিন্তু বাবা দেখো বিরোধী দল শাসিত গুজরাট, ইউপিতে আমার সব বন্ধুরা চাকরি করছে। ওরা আর এখানে ফিরবে না বলেছে। আর আমাদের এই রাজ্যের কী অবস্থা। রামকৃষ্ণ বাবুর ছেলের কথা শুনে তাঁর মা ছুটে এসে ছেলের মুখ টিপে ধরে বলে ওরে চুপ কর দোহাই তোর। কেউ এক্ষুনি শুনতে পেলে পাশের বাড়ির ইন্দ্রজিতের মতো তোরও জিভ কেটে নেবে ওরা। হ্যাঁ, এই নতুন সরকারের আমলে সরকারের সমালোচনা করলে,কিংবা জয় শ্রী রাম বললে তাঁর পরিণত এরকমই হয়। জিভটিকে বলি দিতে হয়।
রামকৃষ্ণ বাবুর আর বলার কিচ্ছু নেই। উনি শুধু হাউহাউ করে কাঁদছেন।
কাঁদার সময়ও ওনার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে ১০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিলের রসিদটা। কারণ এই রাজ্যে বিদ্যুতের ইউনিট এখন ২০ টাকা!
অবসন্ন মনে রামকৃষ্ণ বাবু কেঁদেই চলেছেন। কেউ ওনার কান্না থামাতে যায়নি কারণ সবারই মন গুলো অর্ধমৃত হয়ে আছে।
ছেলেটার মন শক্ত তাই আবার ও টিভি চালিয়েছে। টিভি চালাতেই শিরোনাম এই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী সহ বাকি সমস্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলো। তার সাথেই রাজ্যের সমস্ত সীমানায় আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনের মূল দাবি ভারত রাষ্ট্রের হাত থেকে মুক্তি চাইছে এই রাজ্য। পুনরায় নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র হবে রাজ্য। আন্দোলনের মুখ্যভাগে আছেন মিনি পাকিস্তানের জনক।
এর সাথেই শুরু হয়েছে অবাঙালি খেদাও অভিজান। ধরে ধরে হিন্দিভাষী দের মারতে মারতে ঘর ছাড়া করা হচ্ছে। নির্বিচারে রেল স্টেশন গুলো জ্বলছে। ঠিক সিএএ আইন পাশের পর যেমন হয়েছিল। রামকৃষ্ণ বাবুর অবাঙালি মালিকের কারখানাটাও দাউদাউ করে জ্বলছে। তারা ঘোষণা করেছে এই রাজ্যে আর কোন ব্যবসা নয়।
গোটা রাজ্যজুড়ে চরম উত্তেজনা। আন্দোলনকারী রা ভারতবর্ষের সমস্ত রাজ্যের সাথে সম্পর্ক ছেদের ডাক দিয়েছে। রাজ্য সরকার তাদের দাবী কে সমর্থন করেছে। পাশের দেশ সেনা দিয়ে সাহায্য করার কথা ঘোষণা করেছে। বাংলা আবার দেশ হওয়ার পথে.....
এসব দেখে আর থাকতে না পেরে চিরকাল হিন্দুধর্মের প্রতি বিষোদগার করা রামকৃষ্ণ বাবু ঠাকুর ঘরে ঢুকে হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলছেন ঠাকুর রক্ষা করো। ঠাকুর তুমি ছাড়া কেউ নেই এখন আর। রক্ষা করো ঠাকুর এই সংকট থেকে। আমার পরিবারটা শেষ হয়ে যাবে ঠাকুর। রামকৃষ্ণ বাবু কেঁদেই চলেছেন আর মাথা ঠুকছেন।
হঠাৎ উনি দেখলেন অপরূপ রূপে স্বয়ং নারায়ণ তাঁর সামনে হাজির। পরনে তাঁর গেরুয়া বস্ত্র। মুখে হাসি। পাশে মা লক্ষ্মী গেরুয়া শাড়ি পরে। তাঁরা রাম-সীতা রূপে রামকৃষ্ণ বাবুর সামনে হাজির। ওনাদের দেখে রামকৃষ্ণ বাবুর হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে করজোড়ে অনুরোধ করলেন প্রভু রক্ষা করুন। রক্ষা করুন এই চরম বিপদ থেকে।
প্রভু উত্তর দিলেন তোমাকে রক্ষা করার ক্ষমতা তোমার নিজের হাতেই আছে। পথ আমি তোমাকে দেখিয়েছি। এবার সিদ্ধান্ত নেওয়া তোমার বিষয়। একথা বলেই প্রভু কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেলেন। এদিকে অসহ্য বুকে একটা ব্যাথা অনুভব করায় রামকৃষ্ণ বাবুর ঘুম ভেঙে গেলো। প্রচন্ড ঘেমে গেছেন উনি। ঘড়িতে তখন রাত ৩টে।
হ্যাঁ, এতক্ষণ রামকৃষ্ণ বাবু স্বপ্ন দেখছিলেন। ওনার ঘুম ভেঙে গেছে। আগামীকাল ওনার এলাকায় ভোট। রামকৃষ্ণ বাবু ভেবে রেখেছিলেন ভোট দিয়ে তৃতীয় বার শাসক দলকে সরকারে আনবেন। কারণ বিরোধী দল নাকি বিপজ্জনক। কিন্তু এই যে ওনার ঘুমটা ভেঙে গেছে। উনি এখন জানেন তৃতীয় বার সরকারে ওই দলটা এলে কী কী হবে। এখন উনি জানেন ধর্মের গুরুত্ব ঠিক কতটা। উনি এখন জানেন দেশের মূল্য কী। সর্বোপরি উনি জানেন ভোটটা কোথায় দিতে হবে।
রামকৃষ্ণ বাবু ইভিএমের সামনে যথাস্থানে বোতাম টিপতে টিপতে হঠাৎ যেন দেখছেন গেরুয়া বস্ত্রের সেই যুগপুরুষ পুরুষোত্তম তাঁর ভুবন ভোলানো হাসি মুখে ওনার দিকে আশীর্বাদ করার ভঙ্গিতে হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছেন। রামকৃষ্ণ বাবু দেরি করেননি একটা প্রণাম করে বোতাম টিপে দিয়েছেন......
রামকৃষ্ণ বাবুর ঘুম তো ভেঙে গেছে। উনি সঠিক পদক্ষেপও নিয়েছেন। কিন্তু আপনি? আপনি কী ভাবছেন?
To know the result of Final (March’21) Opinion poll survey for 2021 West Bengal Assembly Election .
Plz click:
https://mamatimanushofwb.blogspot.com/2021/03/final-march21-opinion-poll-survey-for.html
Please see other posts in this blog page by clicking "Home" or from "My Favorite Posts" / "Popular Posts" / "Archives" sections, and if any remarks please feel free to post.
Thanks & Vande Mataram!!
Saroop Chattopadhyay.