Sunday, August 23, 2020

'রাষ্ট্রপুঞ্জের' সম্মান এবং তার সত্যতা যাচাই।— এক মিথ্যাচারের পর্দাফাঁস। "লজ্জা হওয়া দরকার"!!


দিন তিনেক আগে একটি রাজনৈতিক দল একটা খবর প্রচার করে যে তাদের দলের এমএলএ এবং পশ্চিমবঙ্গের শ্রমমন্ত্রী ডাঃ নির্মল মাঝি( করোনাযোদ্ধা (Covid Warrior) হিসেবে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের জন্য জাপানে অবস্থিত একটি রাষ্ট্রপুঞ্জের সহযোগী এনজিও UNWPA দ্বারা সম্মান পেতে চলেছেন। এই খবরটি রাজ্যের শাসকদলের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে নির্ভীকচিত্তে টুইট ও করা হয়। এমনকি টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ডেকান হেরাল্ডের মত সংবাদপত্র এই খবরটি পরিবেশন করে।

এই খবরটার পরিপেক্ষিতে এক রাজনৈতিক দল প্রচার করতে থাকে যে পশ্চিমবঙ্গের করোনা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এবং মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক মহলে এই নিয়ে একটু ক্ষোভ দেখা যায়, কারণ কিছু চিকিৎসক এর বক্তব্য যারা এই মহামারিতে ফ্রন্টলাইনে থেকে পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা স্বীকৃতি পাচ্ছেন না কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবে কেউ সেই স্বীকৃতি অর্জন করছে।

প্রথমে বঙ্গের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে খুশি হই আমরাও। কিন্তু তথাকথিত 'রাষ্ট্রপুঞ্জের সহযোগী সংস্থার' পাঠানো চিঠিতে এমন কয়েকটি ভুল ধরা পরে যে সেটির সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে যায়। এরপর OPINDIA এই চিঠির ব্যাপারে একটু তলিয়ে দেখে। এবং তাতে ধরা পরে বিস্ফোরক সব তথ্য, ধরা পরে বিশাল মিথ্যাচার।

প্রথমত, United Nation World Peace Association(UNWPA) যে চিঠিটা পাঠায় সেটা তাতে তারা পশ্চিমবঙ্গের শ্রমমন্ত্রী কে সম্মোধন করে। কিন্তু এটা যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের করোনাযোদ্ধার স্বীকৃতি হিসাবে চিঠি, তাই সেটা মুখ্যমন্ত্রী বা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দেওয়া ই যুক্তিযুক্ত, কিন্তু তার বদলে দেওয়া হল কিনা শ্রমমন্ত্রী কে!

দ্বিতীয়তঃ, ওই চিঠির ইংরেজি। চিঠির অর্ধেক ইংরেজি লেখার সঠিক কোনো মানেই হয় না! এবং প্রচুর sentence এ অভাবনীয় সব grammatical mistake! চিঠির কয়েকটা লাইন উল্লেখ করলাম :- 'Men are feckless and trying to set back back in their normalize life' এবং 'We are the world family gravely effected due to this outbreak and watching helpless human face daily. During this in nut shell human are in frightful situation'— এই বাক্য গুলির মানে কি? গ্রামারের অবস্থাও করুন! তারপর চিঠির শেষে উল্লেখ করা 'your kingdom'! পশ্চিমবঙ্গ কবে থেকে আলাদা 'Kingdom' হয়ে গেল? একটা আন্তর্জাতিক সংস্থার চিঠিতে এরকম ভুল কখনো হতে পারে কি?!

তৃতীয়তঃ, UN এর Full Form হল ''United Nations''. কিন্তু চিঠিতে UN মানে হয়ে গেছে United Nation! রাষ্ট্রপুঞ্জের সহযোগী সংস্থা রাষ্ট্রপুঞ্জের নামই ভুল বলছে!

এবার আসা যাক UN এর সহযোগী এনজিও এর ব্যাপারে। PTI এর দাবি অনুসারে  UN এর সহযোগী সংস্থা টি UN Department of Economic and Social Affairs civil society তে রেজিস্ট্রার্ড। 

তবে একটু তলিয়ে দেখলে এই সংস্থার সম্পর্কেও ভুল এবং বিশাল মিথ্যাচার ধরা পরেছে।
এক, UN(রাষ্ট্রপুঞ্জ) এবং এই NGO এর  প্রতীকের মধ্যে অদ্ভুত সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। UNWPA এর লোগো তৈরি হয়েছে UN এর লোগো এর সাথে একটি পাখি ও জাপানী চেরি এর ছবি যুক্ত করে! এরকম অদ্ভুত সাদৃশ্যের কারণ কি? মানুষকে বিভ্রান্ত করা?!

দুই, সংগঠন এর নামে United Nation কথা উল্লেখ রয়েছে, United Nations নয়!!! এই সামান্য অক্ষরের পার্থক্য অনেকের চোখে না পরলেও এটা এক মারাত্মক পর্যায়ের জালিয়াতির প্রমান। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাথে সংস্থার কোন সম্পর্কই নেই।

তিন, 'তথাকথিত' এই UN সহযোগী সংস্থার registration number, affiliation number এবং অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এর লিঙ্ক নেই। যা প্রমান করে এই সংস্থা ভুয়ো ও জালিয়াতির উদ্দেশ্যেই বানানো। এবং এই সংস্থার ওয়েবসাইট এর লিঙ্ক বেশিরভাগ ই বৈধ নয় এবং তাদের উল্লিখিত টুইটার লিঙ্কের  (@UnitedNationWo1) কোনো অস্তিত্ব ই নেই! আবার আমাদের রাজ্যের শাসকদলের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল UN এর সম্মান পাওয়ার খবরে ট্যাগ করে আর একটি টুইটার হ্যান্ডেল কে(@Unwpa_wpa) তার ফলোয়ার্স মাত্র 13 এবং তা ফিলিপাইনস থেকে পরিচালিত হচ্ছে! আর এর ফেসবুক পেজের  ফলোয়ার্স 700 এর কম। একটা আন্তর্জাতিক সংস্থার ফলোয়ার্স এত কম! সম্ভবই নয়।

চার, পশ্চিমবঙ্গ কে লেখা চিঠিতে যে ওয়েবসাইট দেওয়া আছে সেই ওয়েবসাইট এ ভারতের রাষ্ট্রদূত এর নাম হিসাবে উল্লেখ আছে 'Her Excellency পিঙ্কি দত্ত'! তার সম্বন্ধে সন্দেহ হওয়াতে তাঁর সম্বন্ধে খোঁজখবর নেওয়া হয়। ফেসবুকে 'Priya Dutta' নামে তাঁর প্রোফাইল আছে। দেখা যায় সেখানে পিংকি দত্ত ওরফে প্রিয়া দত্ত নিজেকে freelance journalist বলে পরিচয় দিচ্ছেন। তাঁর ফেসবুক প্রোফাইল দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র বিরোধী এবং রাম মন্দিরের ভূমি পূজন নিয়ে বিরোধিতা করছেন। এবং অমিত শাহের অসুস্থতা নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন!
তাহলে কি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে রাষ্ট্রপুঞ্জের সহায়ক কোন সংস্থা থেকে চিঠি এসেছে?

OPINDIA যোগাযোগ করার চেষ্টা করে UNWPA এর সাথে যে তারা কি এরকম কোনো চিঠি ইস্যু করেছে? 4:30 AM এ উত্তরে তারা জানায় ওই রাজনৈতিক দলের অফিশিয়াল টুইট এবং মিডিয়াতে চর্চিত ওই চিঠি সম্পূর্ণভাবে ভুয়ো। এখানেই শেষ নয় এর দু ঘন্টা পরে তারা আবার জানায় যেহেতু জাপান থেকে এই চিঠি ইস্যু হয়নি, তাই হয়তো এটি তাদের ভারতের অফিসের 'her excellency' পিংকি দত্ত ওরফে প্রিয়া দত্ত নিজে থেকে ইস্যু করেছে!

তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? রাষ্ট্রসংঘ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘের সহযোগী কোন সংস্থা থেকে পশ্চিমবঙ্গের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকে বাহবা জানিয়ে কোনো চিঠি আসেনি। জাপানের ওই সংস্থা কোন চিঠি দেয়নি, তবে জাপানের সংস্থাটির ভারতীয় রিপ্রেজেন্টেটিভ পিংকি দত্ত ওরফে প্রিয়া দত্ত এই চিঠিটি ইস্যু করেছেন!

অর্থাৎ, বোঝা গেল এই সমস্ত আসলে এক গভীর ষড়যন্ত্র। বাংলার মানুষকে বোকা বানানোর কৌশল ফেঁদেছিল একদল মানুষ।  তারা এখন জালিয়াতি করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাকেও ছেড়ে দিচ্ছে না!

ভয়ানক দিকে যাচ্ছে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ! কিছু লোক বলছে 
"কি ভয়ানক জোচ্চোর। রাষ্ট্রসংঘের লোগো নকল। ভুল ইংরেজীতে মিথ্যে চিঠি।
উনি এটাকেও জাস্টিফাই করে দেবেন।🤔🤔"

#সংগৃহিত

Please see other posts in this blog page by clicking "Home" or from "My Favorite Posts" / "Popular Posts" / "Archives" sections, and if any remarks please feel free to post.
 Thanks & Jai Hind 🇮🇳!! Saroop Chattopadhyay.

No comments:

Post a Comment

Some recent posts

ভগবান রামচন্দ্র (রঘুবীর) ও ঠাকুর শ্রী রামকষ্ণ পরমহংস দেব, আর বর্তমানের সেক্যুলার (আসলে সিক কুলার) গণ।

শ্রীরামকৃষ্ণের কুলদেবতা ছিলেন ৺রঘুবীর। তিনি নিজে  দেবতার কবচ পরতেন, তাঁর পার্থিব শরীর পঞ্চভূতে লয় হওয়ার পরবর্তী সময়ে শ্রীমা সেই পবিত্র কব...