লেখাটি ২৪ শে আগস্ট এর 'স্বস্তিকা' তে প্রকাশিত হয়েছে।
লেখিকা ~ দেবযানী হালদার
সূত্র: স্বস্তিকা
সন্ধ্যা সাতটা বেঙ্গালুরু। জন্মাষ্টমীর সন্ধ্যা। সিলিকন ভ্যালিতে শান্তির পরিবেশ। হঠাৎ রাস্তায় উন্মত্ত জনতা 'আল্লাহু আকবর' আর 'নারা এ তকবীর' এ উথালপাথাল হয়ে গেল শান্তির বাতাবরণ। ভেঙ্গে পুড়িয়ে ফেলা হলো দলিত কংগ্রেস বিধায়ক অখণ্ড শ্রীনিবাস মূর্তির বাংলো। আক্রান্ত হল থানা ও পুলিশ। জ্বালিয়ে দেওয়া হলো অসংখ্য গাড়ি। থানা তছনছ হয়ে গেল যা আইন রক্ষাকারীদের জায়গা।
কারণ: একটা ফেসবুক পোস্ট। এক শান্তির ছেলে বশীর আদিয়ার বশীর প্রথমে হিন্দু দেবী লক্ষ্মী ও তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর 'মর্ফড পিকচার' পোস্ট করেছিল। সেই ফটো অত্যন্ত আপত্তিকর ছিল। পোস্ট কন্নড় ভাষায় বিখ্যাত ভজন 'ভাগ্যদা লক্ষ্মী বড়াম্মা' সহ ছিল। এই ভজন অন্যান্য অনেক শিল্পী সহ বিখ্যাত ধ্রুপদী সঙ্গীত শিল্পী ভীমসেন যোশীও গেয়েছেন। এই পোস্টের কমেন্টে কংগ্রেস বিধায়ক অখণ্ড শ্রীনিবাস মূর্তির ভাগ্নে নবীন একটি ফটো কমেন্ট পোস্ট করে যা মহম্মদ সম্বন্ধীয়। পোস্টে মহম্মদ ও আয়েশার ফটো দেখানো হয়। মহম্মদ সম্বন্ধে কোন ফটো ইসলাম বিরুদ্ধ।
পরিণতি: কেজি হাল্লি ও ডিজি থাল্লি থানা আক্রমণ করে ক্ষুব্ধ সম্প্রদায়। দলিত বিধায়কের বাড়ি ভেঙ্গে ফেলা হয় প্রথমে। তারপর আগুন লাগানো হয়। দমকল সাহায্য করতে এলে তাদের গাড়িও পোড়ানো হয়। এই ঘটনায় ৩ জন মৃত। ১০০ জন আহত। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশও আছে। কর্ণাটকের মন্ত্রী এ. অশোকের বিবৃতি অনুযায়ী ডিসিপিকে বন্দী করে রাখা হয়। তার গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। এমনকি পুলিশ কোয়ার্টারেও আক্রমণ করা হয়। রাস্তা অবরোধ করা হয়। পাথর ছোঁড়া হয় যথেচ্ছ। আশেপাশে প্রচুর গাড়িতে আগুন লাগানো হয়।
কিছু প্রশ্ন:
*এই ঘটনা কি নিছক এক দিনের আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ?
*একটা ফেসবুক পোস্টের জন্য কোন পুলিশ প্রশাসনের উপর ভরসা না করে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত?
*হঠাৎ করে এত এত লোকজন এত কম সময়ের নোটিশে জোগাড় করা কতটা সম্ভব?
*সাইবার পুলিশে কমপ্লেন করে তার আইনি ব্যবস্থার জন্য অপেক্ষা করা হলো না কেন?
*কেন এই সম্প্রদায়ের দেশের আইনের উপর বিশ্বাস নেই?
*নিজেদের ধর্ম রক্ষার নামে জাতীয় সম্পত্তি বা মানুষের ক্ষতি করার অধিকার কোন সংবিধান দিয়েছে?
*এত এত লোককে এত তাড়াতাড়ি জড়ো কারা করলো?
*এত লোকজন সবার হাতে লোহার রড থেকে অস্ত্রশস্ত্র, পাথর কারা সরবরাহ করলো?
*এই অস্ত্রশস্ত্রের টাকা কে দিলো? সেই টাকা এলো কি ভাবে?
*কোন অথোরিটির সঙ্গে কথা না বলে ডাইরেক্ট অ্যাকশন কেন হলো?
*হিন্দু সম্প্রদায়কে আঘাত করতে পোস্ট করেছিল বশীর আদয়ার বশীর, তার বিরুদ্ধে এরা কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল?
*দলিত বিধায়ককে আক্রমণ করা হলে দলিত মুসলিম ঐক্যের বাজনা কে বাজাবে?
*কংগ্রেস নিজের বিধায়ক না মুসলিম কার পক্ষ নিয়েছে?
*বেছে বেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যে হলে তার ব্যাখ্যা আলাদা হয় কেন?
*কংগ্রেস বিধায়কের ভাগ্না হঠাৎ এই পোস্ট করল কি কারোর থেকে নির্দেশ পেয়ে?
*সাধুদের পিটিয়ে যখন মারা হয়েছিল, হিন্দু সম্প্রদায় কাউকে আঘাত করলে কি ভাবে তার বিশ্লেষণ করা হতো?
না, এদের কোন যথাযথ উত্তর অফিসিয়ালি এখনও পাওয়া যায় নি, হয়ত যাবেও না। এরকমটাই এদেশে হয়ে আসা দস্তুর। এটাই ইতিহাস, এটাই ভবিষ্যত। ওদের ধর্মানুভূতি বজায় রাখার দায়িত্ব ওদের, আইনেরও নয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা শুধু মাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য যারা আইন মেনে চলে। আর যারা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছে বরাবর, তারা অবশ্য কখনও দাঙ্গার দায়িত্ব নেয় নি।
অন্য ধর্মের প্রতি এত বিদ্বেষ, এত ঘৃণা নিয়ে এরা দিল্লী থেকে বেঙ্গালুরু, যে কোন শহরে অনায়াসে দাঙ্গা লাগিয়ে দেয়। ১০ ই জানুয়ারি 'টাইমস নাউ' চ্যানেলে একটি ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে যাতে রাম মন্দির নির্মাণের বদলা হিসেবে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। ওরা পৃথক 'মুসলিম স্টেট' দাবী করছে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী যাতে স্বাধীনতা দিবসের দিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে না পারেন, তার প্রচেষ্টা চলছে সর্বতোভাবে। মুসলিম ভাই বোনদের আহ্বান জানানো হয়েছে এর উদ্দেশ্যে। ওই দিন রাত্রে ১০:৪৫ নাগাদ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে লেনদেনের ছবি। ফান্ডিং তো আছেই, কেরলের গোল্ড স্মাগলিং মনে করিয়ে দেয় অনেক কিছু। প্রশ্ন অনেক, উত্তর নেই।
১১ ও ১২ আগস্টের মাঝখানের রাত দুটোর সময় কংগ্রেসের ন্যাশনাল সেক্রেটারি ও আইটি ইন চার্জ জাকিয়া খান একটি ভিডিও পোস্ট করে। যাতে দেখা যায় একটি মন্দিরের বাইরে মুসলিম ছেলেরা মানববন্ধন করে মন্দিরটিকে বাঁচানোর জন্য শৃংখলাবদ্ধ হয় দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে তাড়াতাড়ি আপলোড করার কথা পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে। অর্থাৎ যা হয়েছে সবটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমন ঘটনা আমরা আগে দেখেছি দিল্লির দাঙ্গা, অ্যান্টি সিএএ আন্দোলনের সময়। এমন মানববন্ধন কিছু নতুন নয়। অভিনব তো মোটেই নয়। যারা সন্ধ্যেবেলায় এমন তছনছ করল পুরো শহর, পুলিশ ও তাদের পরিবারের আর্তনাদ যাদের মধ্যে একটুও দয়ামায়া তৈরি করে নি, যারা এটিএম থেকে গাড়ি, ভাঙচুর করেছে সব। পুলিশকে ধাওয়া করে বেসমেন্টেও চড়াও হয়েছে, যাদের জন্য শান্ত একটা শহরে কারফিউ জারি হয়ে গেল, তারা হঠাৎ করে একটা মন্দিরের বাইরে মানববন্ধন করে তাকে বাঁচানোর ভিডিও শুধু ভাইরাল হলো। আবার বাঁচাবে তাদের সম্প্রদায়ের হাত থেকেই। মন্দির হিন্দু ভাঙ্গবে না। শুধু তাই নয়, প্রতিটা নিউজে তাদের ধর্মের উল্লেখ পরিষ্কার ভাবে করে দেওয়া হল। অথচ কারা মেরেছিল, কারা প্রথম পোস্ট করেছিলো, না তাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে, না তাদের ধর্ম প্রকাশ করা হয়েছে। এই ঘটনায় যারপরনাই উৎফুল্ল হয়েছে লিবারেল আর সেকুলর গোষ্ঠী। মানববন্ধনের জয়গাথা গাইতে গিয়ে হ্যাজের পর হ্যাজ নেমে গেছে। অথচ দাঙ্গার জন্য ন্যূনতম নিন্দাসূচক একটা বাক্য খরচ করে নি।
বেঙ্গালুরুর মানববন্ধনের আগে আরও মানববন্ধন হয়েছে।
প্রথম ঘটনা: এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লীতে দাঙ্গার সময় মুসলিমরা মন্দির বাঁচাতে এমনি এক মানববন্ধন তৈরি করেছিল। তাদের ভয় ছিল যে পাছে হিন্দুরা নিজেরাই নিজেদের মন্দির ভেঙ্গে মুসলিমদের দায়ী করে।
দ্বিতীয় ঘটনা: জানুয়ারি, ২০২০ সালে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টে যারা শরণার্থী তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সেখানে অনুপ্রবেশকারী যারা তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই আইনের ভুল ব্যাখ্যা করে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন দিল্লীর শাহিনবাগে প্রতিবাদের নামে দেশের রাজধানীর জীবন স্তব্ধ করে দেয়। এই প্রতিবাদ চলাকালীন এক আম আদমী পার্টির সমর্থক গুলি চালালে মুসলিম মহিলারা মানববন্ধন তৈরি করেছিল।
মিডিয়া হিন্দু এলাকায় এদের খাবার সরবরাহ করা, কোথাও হিন্দু বিধবাকে বাঁচানো, কোথাও মন্দির ভাঙ্গার পর মূর্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার খবর ফলাও করে প্রকাশ করে। কিন্তু ওই খাবার সরবরাহ করার কারণ যে দাঙ্গা সেটা ওই মুসলমান সম্প্রদায় করেছিল, কেউ বলে না। মন্দির ভাঙ্গার খবর বেরোলেও কারা ভেঙ্গেছিল সেই ধর্ম পাওয়া যায় না কোন ময়নাতদন্তে। কিন্তু মূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার সময় ধর্মের উল্লেখ থাকে পরিষ্কার হরফে। দিল্লীর দাঙ্গার সময় মুসলিমরা দায়ি এই কথা না লিখলেও কত দয়ালু মুসলিম যে কত হিন্দুর প্রাণ বাঁচিয়েছে 'মসিহা' হয়েছে, সে খবরের প্রচার চলেছে জোর কদমে।
কোন মিডিয়া প্রথম ফেসবুক পোস্টে হিন্দুধর্ম ও প্রধানমন্ত্রীর ঘৃণ্য যে ভুয়ো ফটো পোস্ট হয়েছিল, তার উল্লেখ পর্যন্ত করে নি। নিজেদের বেলায় ফেসবুক পোস্টে এরা নিজেদের কাজকে জাস্টিফাই করে আর অন্যদেরকে আক্রমণ করে নিজেরা ভিকটিম সাজে। আর অন্যদের বেলায় চুপ থাকে। প্রথম যখন পোস্ট হল তখন প্রধানমন্ত্রীর গরিমা, হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতির জন্য কারোর কাছে কোন মূল্য ছিল না। এরা নিজেদের বেলায় এত রিজিড কিন্তু অন্যের বেলায় নীরব, 'নিজের বেলায় দাঁতকপাটি, পরের বেলায় আঁটি শুঁটি'। আইনি প্রক্রিয়ার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ অপেক্ষা করতে পারে, সংখ্যালঘু হলে 'নারা এ তকবীর' বলে নিজেদের হাতে আইন তুলে নেবার এই দ্বিচারিতার অধিকার দেওয়া হয়েছে যেন। তারা তাদের ধর্ম রক্ষা করবার জন্য সমাজকে আক্রমণ করতে পারে, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করতে পারে, লুট করতে পারে, দাঙ্গা করতে পারে, আগুন জ্বালাতে পারে, দেশে অস্থির পরিবেশ তৈরি করতে পারে। সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার যেখানে সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে এই দেশের সমস্ত নাগরিক তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে। কিন্তু সেটা শুধু এদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। কমলেশ তিওয়ারির সময় দুই লক্ষ সাম্প্রদায়িক লোক বেরিয়েছিল ধর্ম রক্ষার্থে, তারপর কালিয়াচকের দাঙ্গা। অ্যান্টি সিএএ আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছি এই দেশে থাকবার জন্য তারা দু'মাস ধরে রাজধানী অচল করে রেখে দিল যদিও আইনের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কমলেশ তিওয়ারিকে বাঁচানো পর্যন্ত গেল না। অঙ্কিত, সেই দিল্লীর দাঙ্গা, বাঁচে নি সেও। এদিকে সাধুদের পিটিয়ে মেরে ফেললেও আমরা দুদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু পোস্ট করার পর ভুলে যাই। জম্মুর এক অখ্যাত কাঠুয়ার এক মন্দিরে আসিফা নামে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলে কত সহজে সমগ্র হিন্দু সমাজ, মন্দির সবাইকে ধর্ষক বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 'হিন্দু সন্ত্রাস' বলে একটা অধ্যায় শুরু হয়েছিল মালেগাঁও ব্লাস্টের মিথ্যা ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুধু হিন্দু যাতে বদনাম হয়। যে কোন মিডিয়ায় মুসলিম দাঙ্গাকারীর নাম থাকে না, হিন্দু হলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মানববন্ধন হলে সেখানে মুসলিম উল্লেখ করা হয়, খুব সচেতন ভাবে।
এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে, ছোটবেলায় রিফ্যুজি কলোনি থেকে কেউ এলেই গল্পের বিষয় হতো, "ওঃ ভাগ্যিস আমাদের রহমত, জুবের ছিল, তাই প্রাণ হাতে করে ইণ্ডিয়া চলে আসতে পেরেছিলাম সবাই।" যেন যারা তাড়িয়েছিল তাদের নাম 'রাম, শ্যাম, যদু' ছিল। স্বীকার করে নাও, রহিম তাড়িয়েছিল, রহমত রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পার করিয়ে দিয়েছিল। আসলে সবটাই অধিকারের খেলা, কখনো ধর্মের অধিকার, কখনো ধর্মরক্ষার অধিকার, কখনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার অধিকার। আর এই করতে করতে কখন যে 'দাঙ্গার অধিকার' পেয়ে যায়, আমরা জানতেই পারি না।
আমাদের এই সব মানববন্ধন চাই না। আমাদের মন্দির বাঁচানোর কোন দরকার নেই। মন্দির ওদের নয় আমাদের 'আমানত'। মন্দির ভাঙ্গছে যারা তাদের এই সব বুজরুকি না করে বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধ করার দিকে নজর দিক, মন্দির ভাঙ্গার মত পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না। এই দেশে দাঙ্গার অধিকার যার, মানববন্ধন নামে মন্দির বাঁচানোর ভণ্ডামি তাদের না করাই ভাল। নিজেদের ইমেজ ঠিক করতে মানববন্ধনের গল্প না তৈরি করে পাথর ছোঁড়া থেকে বিরত হলেই দেশে প্রকৃত শান্তি বজায় থাকবে। একপক্ষ সবসময় আগুন জ্বালাবে আর আরেক পক্ষ শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটা কোন কাজের কথা নয়। হয় মানসিকতার পরিবর্তন হোক, নাহলে এইসব মানববন্ধন নামে নাটকের পটকথা তৈরি বন্ধ হোক। দাঙ্গার অধিকার যার, দাঙ্গার দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।
No comments:
Post a Comment