পড়ন্ত বিকেলে ক্লাস শেষে, কয়েকজন ছাত্র স্কুলের খেলার মাঠে খেলছিল। শেষ বিকেলে হঠাৎ তারা আবিষ্কার করল, খেলার মাঠের অন্য দিকে তিনটি ছাগল ঘাস খাচ্ছে। দলের নেতার মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সে অন্যান্য ছেলেদের বোঝাল, "ছাগলগুলোর মাথায় নম্বর লিখে দিলে কেমন হয়?" তিনটি ছাগলকে ধরা হোল, রং এবং ব্রাশের ব্যবস্থাও হয়ে গেল। ছাগলগুলিকে নম্বর দেওয়া হল; ১, ২, ৪, উদ্দেশ্যমূলকভাবে তারা “৩” নম্বরটি লিখল না।
এরপর তারা তিনটি ছাগলকে সারা রাতের জন্য পর্যাপ্ত ঘাস এবং ঝোপঝাড়ের পাতা সমেত স্কুল ভবনের ভিতরে ঠেলে দিল। ততক্ষণে বিকেল শেষ, ছেলেগুলি নিজেদের বাড়ি চলে গেল। পরের দিন সকালে স্কুল খোলার জন্য চাবি নিয়ে পিওন ঠিক সময়ে হাজির। তালা খুলতে গিয়ে নাকে এল তীব্র প্রস্রাব এবং বিষ্ঠার গন্ধ। তিনি অনুমান করতে পারলেন, নিশ্চয়ই কোন গবাদি পশু, স্কুল ভবনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। তালা না খুলে, অন্যদের আসার জন্য কিছু সময়ের জন্য অপেক্ষা করল।
কয়েক মিনিট পরে, প্রিন্সিপাল, সমস্ত শিক্ষক, ছাত্র, অফিস স্টাফ ধীরে ধীরে স্কুল-ভবনের গেটে জড়ো হয়ে গেল। যথারীতি, প্রিন্সিপাল নেতৃত্ব দিলেন এবং তালা খোলা হল। একজন অতি উৎসাহী ছাত্র গেটের কাছে সিঁড়িতে ছাগলের বিষ্ঠা দেখে চেঁচিয়ে উঠল। বোঝা গেল, যে ভাবেই হোক স্কুল-ভবনে ছাগল প্রবেশ করেছে।
প্রিন্সিপালের নির্দেশে অনুসন্ধান শুরু হয়ে গেল। বারান্দা, শ্রেণিকক্ষ, অফিস এবং এমনকি ওয়াশরুম পর্যন্ত খুঁজে শেষ পর্যন্ত তিনটি ছাগল আবিষ্কার করা গেল।
ছাগলগুলিকে অধ্যক্ষের ঘরে নিয়ে আসা হল। দেখা গেল, প্রত্যেকটি ছাগলের মাথায় একটি করে সংখ্যা লেখা আছে। অবাক কান্ড, সংখ্যা গুলি ১, ২ এবং ৪; সমস্যা হল যেহেতু ৪-নম্বরের ছাগল পাওয়া গেছে, তা হলে ৩-নম্বরের ছাগলটি গেল কোথায়?
প্রিন্সিপাল, সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করলেন এবং আরও একবার গভীর অনুসন্ধানের নির্দেশ দিলেন।
কৃতিত্ব নিতে প্রত্যেকে, পাগলের মত, ৩-নম্বর ছাগল খুঁজতে লাগল। আশ্চর্যভাবে ৩-নম্বর ছাগল সন্ধানকারীদের মধ্যে কেউই ৫-নম্বর ছাগলের সম্ভাবনা ভেবে দেখল না। যেহেতু ৪-নম্বর ছাগল পাওয়া গেছে, তাই তারা নিশ্চিত ছিল, ৩-নম্বর ছাগল নিশ্চয়ই আছে।
সারাদিন অনুসন্ধান চলতে থাকল। ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া হল। সবাই ক্লান্ত। ধীরে ধীরে আতঙ্ক ও হতাশার সৃষ্টি হল। অনিবার্যভাবে ৩-নম্বর ছাগলটি খুঁজে পাওয়া গেল না। কারণ এটির কখনও অস্তিত্ব ছিল না।
গল্পটি খুবই ছোট এবং মজার। তবে এটি এক গভীর শিক্ষা দেয় এবং তা সমস্ত মানব সমাজের জন্য প্রযোজ্য।
আমাদের মধ্যে অনেক আছেন, যারা একটি ভাল জীবন এবং তাদের প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই থাকা সত্ত্বেও, সবসময় একটি "তৃপ্তির অভাব" বোধ করতে থাকেন। করুণভাবে, হন্যে হয়ে খুঁজছেন সেই ছাগল নম্বর-৩, যেটি বাস্তবে অনুপস্থিত বা অধরা।
মনস্তত্ববিদরা এটিকে বলেন "মিসিং গোট সিনড্রোম" বা " মিসিং টাইলস সিনড্রোম"। এটি হল যা আছে তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে, সোনার হরিন খুঁজে বেড়ানো। সব জিনিসের উপস্থিতি সত্বেও যা নেই তার জন্য বিলাপ করা। নিখোঁজ ছাগল নম্বর-৩ এর বিলাপ এড়ানোর সর্বোত্তম উপায় হ'ল ওইসব ব্যক্তিদের দিকে তাকানো, যারা বিলাসিতা তো দূর, তাদের প্রাথমিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
একটু ভেবে দেখুন:
▶️ “যদি আপনার ফ্রিজে খাবার থাকে, আপনার পরনের কাপড় থাকে, আপনার মাথার উপর একটি ছাদ থাকে এবং ঘুমানোর একটি জায়গা হয় তবে আপনি বিশ্বের ৭৫ শতাংশের চেয়ে বেশি সমৃদ্ধ।
▶️ যদি আপনার ব্যাঙ্কে টাকা থাকে, আপনার মানিব্যাগ এবং কিছু খুচরো থাকে, তবে আপনি বিশ্বের ৮ শতাংশ ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন।
▶️ যেহেতু, সুস্থ শরীরে আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেছেন, তবে আপনি এক মিলিয়ন লোকের চেয়ে বেশি ভাগ্যবান যারা এই সপ্তাহে বেঁচে থাকবে না।
▶️ আপনি যদি কখনও যুদ্ধের ঝুঁকি, কারাবন্দি বা নির্যাতনের যন্ত্রণা বা অনাহারে ভয়াবহ যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা না পেয়ে এখন ও বেঁচে আছেন তাহলে আপনি ৫০০ মিলিয়ন মানুষের চেয়ে বেশি ভাগ্যবান।
▶️ যদি আপনি এই লেখাটা পড়তে পারেন, আপনি বিশ্বের ৩ বিলিয়ন মানুষের চেয়ে যারা এ সব পড়তে পারে না তাদের চেয়ে বেশি ভাগ্যবান।
কোনরকম উদ্বেগ ছাড়াই জীবনটি অনেক বেশি সুখী হবে, যদি আমাদের যা আছে তা উপলব্ধি করি, জীবনের রঙগুলির প্রশংসা করি, আমাদের জীবনে প্রতিটি ব্যক্তির অনন্য গুণাবলীর প্রশংসা করি। সুতরাং, সুখ বা সাফল্যকে তাড়া করবেন না। এটি পৌঁছনোর কোনও গন্তব্য নয়, কেবলমাত্র হয়ে ওঠার যাত্রা। আপনার যে কোন অবস্থায়, পছন্দ করার অধিকার আছে একটি সুখী ও সফল জীবনের। কারণ ৩-নম্বর ছাগল কখনই খুঁজে পাবেন না, কারন এর বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই।
জীবন যেমনটি আছে, সেইভাবে উপভোগ করুন। আপনার যা আছে তা দিয়ে আপনার জীবন উপভোগ করুন। প্রথমে আপনার পরিবারের সাথে এটি শুরু করুন, আপনার স্ত্রী, বাবা-মা, সন্তান, শ্বশুর-শাশুড়ির দুর্দান্ত গুণাবলী দেখুন এবং তারপরে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন এবং সহকর্মীদের কাছে যান।
কাল্পনিক, অস্তিত্ববিহীন সোনার হরিন বা ৩-নম্বর ছাগল খুঁজে, আর আপনার সময় এবং সুখ নষ্ট করবেন না।
(সংগৃহীত)
No comments:
Post a Comment